এম সাইফুর রহমান দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করেছিলেন : সিলেটে মঈন খান

post-title

ছবি সংগৃহীত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মঈন খান বলেছেন, খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রণেতা বলা হয়। তার কনজার্ভেটিভ নীতি অনুসরণ করে দেশের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছিল। পরবর্তী ফ্যাসিবাদী সরকার সেই নীতি থেকে বেরিয়ে এসে লুটপাট ও পাঁচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে।

তিনি শুক্রবার বিকেলে সিলেট শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে এম সাইফুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্যে ড. মঈন খান আরও বলেন, বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে সাইফুর রহমানের সর্বশেষ আধুনিক ভ্যাট পদ্ধতির সংযোজন ছিল দেশের অর্থনীতির রক্ষাকবচ। পদ্ধতি ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশ টিকতে পারে না। অথচ, এই পদ্ধতির বিরোধিতা করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। তারা রাজপথে আন্দোলন করেছিল, এমনকি হরতাল ডেকেছিল। সেই সময় সাইফুর রহমান বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে এই সিদ্ধান্ত না নিলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়তো।

স্মৃতিচারণ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমার বাবা ছিলেন সাইফুর রহমানের সহকর্মী৷ তিনি যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তখন আমার বাবা আব্দুল মোমেন খান ছিলেন কেবিনেট সচিব। সৌভাগ্যক্রমে আমিও তার সহকর্মী হতে পেরেছি। এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের।

তিনি আরো বলেন, আমাকে যখন বেগম খালেদা জিয়া ক্যাবিনেটে অন্তর্ভূক্ত করেন তখন আমি ও তিনি (সাইফুর রহমান) পাশাপাশি মুখোমুখি কক্ষে বসে কাজ করেছি। যখন প্রয়োজন হয়েছে তার কাছে ছুটে গেছি, পরামর্শ নিয়েছি।

মঈন খান বলেন, আমি যখন তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করি তখন তিনি পাশে দাঁড়িয়েছলেন। তিনি সেই সময় আমার প্রতি স্নেহের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

সিলেটের তরুণ পজন্মের উদ্দেশে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, তার অনেক বড় অর্জন এখনকার তরুণ প্রজন্ম জানে না। সাইফুর রহমান ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সুবর্ণজন্তীতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তখন তাকে বিশ্ব ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এটা জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের।

আব্দুল মঈন খান বলেন, সাইফুর রহমান ১৯৬৯ সালে বিলেত থেকে দেশে ফিরেন। তখন দেশে সিএ ডিগ্রিধারী মানুষের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। এরপর মেজর জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং ২০০৬ সাল পযন্ত দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বাজেট ঘোষণাকারী ছিলেন। ৩৬ বছরে এক ডজন বাজেট ঘোষণার কৃতিত্ব তাঁর। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তার প্রতি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলে তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন।
মঈন খান সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকে নিয়ে তরুণ প্রজন্মের গবেষণা চর্চার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সিলেটের একজন সাইফুর রহমান দেশের অর্থনীতির রূপকার ছিলেন, পুরো অর্থনীতির আমূল-পরিবর্তন সাধন করেছেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের জন্য। তাকে জানা ও তার অর্থনীতির নীতি ও কৌশল সম্পর্কে গবেষণা করেন। তার জীবন থেকে শেখার আছে।

সভায় স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম, নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভিসি প্রফেসর ড. মো. ইকবাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর মাহবুব এলাহী, সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদ, সিলেটের সভাপতি ডা. শামিমুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ও মিফতাহ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী,সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী।

উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি নাছিম হোসেন, বাচিক শিল্পী ও কবি সালেহ আহমদ খসরু, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মাহবুবুর রব ফয়সল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদ এমরান আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার প্রমুখ। স্মরণসভায় বিএনপিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। সভা সঞ্চালনা করেন, ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদ খান ।

এর আগে, সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাদ জুমআ সিলেটের বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও শিরনি বিতরণের আয়োজন করা হয়।

বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, কৃষিনির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি স্বনির্ভর অর্থনীতির দেশ হিসিবে পরিচিত করতে এম সাইফুর রহমান অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। একজন রাষ্ট্রপ্রধানের মতো তিনি সফল অর্থনীতিবিদ হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন আমি এম সাইফুর রহমানের সঙ্গে কাজ করেছি। তাঁর স্মৃতি বলে শেষ করতে পারবো না। শেষবার যখন এসেছেন সিলেটে, বলেছেন- যতদিন দেশ নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা হবে মঙ্গলের, তোমরা তাকে ছেড়ে যাবে না। মুনাফিক সঙ্গ ত্যাগ করবে। এরপর তিনি গেলেন আর ফিরলেন না। দেশে যেন শান্তি ফিরে সেই দোয়া করবেন।

এসএ/সিলেট