কুলাউড়ায় ইউএনও’র উদ্যোগ : শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই অনলাইনে ব্যাংকে জমা দিচ্ছে টাকা

post-title

ছবি সংগৃহীত

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনের নেয়া ব্যতিক্রমী “শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই বিভিন্ন ফি’র টাকা ব্যাংকে জমা দিচ্ছেন” উদ্যোগটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এদিকে এই উদ্যোগের সুফল কুলাউড়ার  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পাওয়ার পর জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি যেমনটা কমেছে তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে সোনালী ব্যাংক পিলসি’র অনলাইন সেবার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ফি/চার্জ আদায়করণ সম্পর্কিত এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অনলাইন সেবা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন সোনালী ব্যাংকের সিলেট বিভাগীয় ইনচার্জ মোঃ আমান উল্লাহ। এসময় সোনালী ব্যাংক কুলাউড়ার ব্যবস্থাপক মো. আবু বকর সিদ্দিক, উপজেলা কৃর্ষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার শফিকুল ইসলামসহ মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের প্রধানগণ। এসময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বলেন, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো বেতনসহ অন্যান্য ফি আদায়ে নানা জটিলতায় পড়তে হতো। অতীতে ম্যানেজিং কমিটির প্রভাবে স্বচ্ছতায় ভাটা পড়তো। অনলাইন ব্যাংকিংয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা  নিশ্চিতের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমেছে।

জানা যায়, অতীতে কুলাউড়ার সবক’টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যেত। এসব অভিযোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধেই ছিল। আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন, ভর্তি ফিসহ বিভিন্ন খাতের টাকা এখন থেকে আর নগদ লেনদেন হবেনা। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই অনলাইনে টাকা ব্যাংকে জমা দিতে পারবেন। গত নভেম্বর মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনের উদ্যোগে উপজেলার সবক’টি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের প্রধানদের নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠক করার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সিদ্ধান্তের পর সোনালী ব্যাংকের অনলাইন ‘সোনালী সেবা’ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে যাবতীয় বেতন ফি, চার্জ আদায়ের জন্য সোনালী ব্যাংক পিএলসি’র পক্ষ থেকে অফার লেটার উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়।

পরে সোনালী ব্যাংক কুলাউড়া শাখায় চুক্তি সম্পাদন করার জন্য সম্মতি প্রদান করে কুলাউড়ার মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজগুলো। কুলাউড়ায় মাধ্যমিক স্তরে মোট ৪০টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উত্তর কুলাউড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদুর রহমান কবির বলেন, ইউএনও স্যারের ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি মাধ্যমিক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানও এই অনলাইন সেবার আওতায় এসেছে। এই সেবার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি যেমন কমেছে তেমনি স্বচ্ছতাও এসেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত কুলাউড়ার ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে বর্তমানে এই অনলাইন সেবার আওতায় এসেছে। আরো ৩টি প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াধীন আছে। ভোগান্তি ছাড়াই শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে ব্যাংকে টাকা জমা দিচ্ছে।

এই পদ্ধতির ফলে স্কুল-কলেজগুলোতে স্বচ্ছতা ও আয় বেড়েছে। তিনি বলেন, গত নভেম্বর মাসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নীতিমালা অনুসারে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠকে করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যেসকল প্রতিষ্ঠান আগ্রহী ছিল তাদেরকে সোনালী ব্যাংক অফার লেটার দিয়েছে। তারপর স্কুলগুলো সম্মতি দেয়ার পর ব্যাংকের সাথে চুক্তি সম্পাদন হয়। আশা করছি পর্যায়ক্রমে সকল প্রতিষ্টান এই পদ্ধতির আওতায় আসবে।

জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, কুলাউড়ার ইউএনও’র উদ্যোগটি খুবই সময়পোযোগী। এই উদ্যোগের সুফল পাওয়ায় জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। মঙ্গলবার মৌলভীবাজার কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজও এই সেবার আওতায় এসেছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে মনে করি।


এসএ/সিলেট