নিজের স্ত্রীকে দিয়ে বিএনপি...
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ নানা অপকর্মের হোতা, যুবলীগ নেতা সেলিম আহমদ একসময় র্যাবে চাকরি করতেন। বিগত সময়ে তিনি চাকরি বাদ দিয়ে জড়িয়ে পড়েন বালু মহাল...
ছবি সংগৃহীত
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধ: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়িসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ইমামবাড়ায় শিয়া মতাবলম্বীরা ইমাম হোসাইন ও কারবালার শহীদদের স্মরণে মজলিশ, মাতম, মর্সিয়া, জারি, নোহা, তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে শোক অনুষ্ঠান পালন করেছে।
‘হায় হোসেন হায় হোসেন’ মর্সিয়া শোক ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছে তাজিয়া মিছিল। শোক মাতমে নিজ শরীর রক্তাক্ত করে সরব হয়েছে লংলা অঞ্চলের ইমামবাড়াগুলো।
রবিবার (৬ জুলাই) মহরমের শেষ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্য ও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের নবাববাড়িসহ অন্যান্য ইমামবাড়ায় এই শোক পালন করা হয়।
রবিবার বিকেলে নবাব বাড়ির হোসেনি দালান থেকে বের হয় সু-সজ্জিত তাজিয়া মিছিল। শিয়া সম্প্রদায়ের সহস্রাধিক পুরুষ নানা অনুষঙ্গ, তাজিয়া, কালো, লাল ও সবুজ নিশান উড়িয়ে মিছিলে অংশ নেয়। খালি পায়ে মিছিলে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা শোকের প্রতীক কালো পোষাক পরিধান করে।
দীর্ঘ সাড়ে তিনশত বছর ধরে বৃহত্তর সিলেটের নবাব আলী আমজদের পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত এই জমিদার বাড়ি (নবাব বাড়ি) বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। মহরমকে কেন্দ্র করে নবাববাড়ির আশপাশের এলাকায় লোকে লোকারণ্য ছিল। ভাসমান প্রায় কয়েক শতাধিক দোকান-পাটের মেলা বসে। দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেও শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আশুরা উপলক্ষে এখানে ছুটে এসেছেন।
প্রায় দশ সহস্রাধিক মানুষের সমাগম ঘটে জমিদার বাড়িতে। পহেলা মহরম থেকে দশ মহরম পর্যন্ত পৃথিমপাশা জমিদার বাড়ীর ইমামবাড়া, তরফি সাহেব বাড়ী, ছোট সাহেব বাড়ী, মরহুম শাহাদাত হোসেনের বাড়ী, বাঘ বাড়ী, মনরাজ সাহেব বাড়ী, পাল্লাকান্দি সাহেব বাড়ী, সরদার বাড়ি, মেম্বারের বাড়িসহ অন্যান্য ইমামবাড়া গুলোতে মহরম ও কারবালার ইতিহাস স্মরণে মজলিশ, মাতম, নোহা, জিয়ারত, দোয়া, জারি, শিরনির আয়োজন করা হয়।
মহরমের শোক অনুষ্ঠান ও আশুরা পালনের জন্য পৃথিমপাশা জমিদার বাড়ির ইমামবাড়া গুলোতে কারবালার ইতিহাসের উপর বয়ান করেন মাওলানা সৈয়দ আফতাব হোসাইন নাকাভী (ঢাকা), মাওলানা আনিসুর রহমান (জয়পুরহাট), মাওলানা মুহাম্মদ মাজিদুল ইসলাম (রাজশাহী) ও মাওলানা মুহাম্মদ আবুজার ইসলাম (সৈয়দপুর)।
সরেজমিন দেখা যায় রবিবার বিকেল পাঁচটায় পৃথিমপাশার জমিদার বাড়ির হোসেনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিলসহ ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ ধ্বনিতে শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারীরা নিজের শরীর রক্তাক্ত করে মিছিলটি আলী আমজদ স্কুল এন্ড কলেজের সম্মুখে রবিরবাজার পদ্মদিঘির পার স্থানীয় কারবালা প্রান্তরে (কবরস্থানে) গিয়ে সমবেত হয়। সেখানে মহরমের সেই বিষাদময় দিনে ইমাম হোসেনের করুন মৃত্যুর প্রতিবাদে ‘হায় হোসেন হায় হোসেন’ মাতম করে আবারও নিজের শরীর রক্তাক্ত করে কারবালার শোকে শোক পালন করেন। কালো জামা রক্তে ভিজে চুপসে গেছে আর সাদা জামা হয়ে উঠে রক্তে রঞ্জিত। তবুও হায় হোসেন, হায় হোসেন, ধ্বনিতে প্রকম্পিত হচ্ছে জমিদার বাড়ির আকাশ-বাতাস। তাজিয়া মিছিলে বুক চাপড়ে, জিঞ্জির দিয়ে শরীরে আঘাত করে প্রকাশ করা হয় মাতম। কেউ আবার ধারালো ছোরাগুচ্ছ দিয়ে নিজ শরীর ও মাথা রক্তাত্ব করতে দেখা যায়।
পৃথিমপাশার শিয়া অনুসারীরা জানান, মিছিলের শুরুতেই দুটি কালো গম্বুজ বহন করা হয় বিবি ফাতেমার স্মরণে। এছাড়াও মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন নিশান নিয়ে আসেন। যে যার মতো এই নিশান বহন করেন। মিছিলের মধ্যে হায় হোসেন, হায় হোসেন করে শোকের গান গাওয়া হয় সমবেত কন্ঠে। এছাড়াও অনেকেই বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম মাতম, তাজিয়া মিছিল করে মহরম মাসের এই মর্মান্তিক ঘটনাকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন এবং প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (আঃ) ও বাহাত্তর জন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক জানান।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ গোলাম আপছার বলেন, পৃথিমপাশা জমিদার বাড়িতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক স্থরের নিরাপত্তা চাদরের বেষ্টনি তৈরি করা হয়। পুরো জমিদার বাড়ি জুড়েই পুলিশ, ডিবি পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশ প্রস্তুত ছিলো। এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা ও প্রশাসনের তৎপরতায় কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই মহরম অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
মহরম অনুষ্ঠানের মোতাওয়াল্লি ও সাবেক সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাছ খান জানান, চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছরের ন্যায় মহরমের শোক অনুষ্ঠান পালন করা হচ্ছে। দীর্ঘ সাড়ে তিনশত বছর ধরে পৃথিমপাশায় শিয়া, সুন্নি ও অন্যান্য মতাবলম্বী এবং উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আশুরার শোক পালন করা হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে।
এসএ/সিলেট