যুব উন্নয়ন ফোরামে অংশ নিতে...
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের তরুণ নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করতে চীন যাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পলিটিক্যাল...
মো. মুজাম্মিল আলী
ফয়সল আহমদ রুহেল:: দীর্ঘ ২৭ বছর শিক্ষকতা করেছেন মো. মুজাম্মিল আলী। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে নীতির প্রশ্নে অটল ছিলেন। ফলে তার সব ছাত্রছাত্রীর কাছে ছিলেন আদর্শ শিক্ষক। বিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মকান্ডে তাঁর ওপর বিদ্যালয় প্রশাসনের ছিল গভীর আস্থা ও নির্ভরতা। ছাত্রছাত্রীদের ছিল অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধা। শিক্ষকতা জীবনে তিনি এ অঞ্চলের ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন। দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর শিক্ষকতা করে ১৯৯৫ইং সনে অবসর নেন। শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ভ্রমন ভিসায় আমেরিকা চলে যান। দেশ মাতৃকার টানে আবার দেশে চলে আসেন। চিন্তায় ও মননে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি যে জ্ঞানের প্রদীপশিখা এ অঞ্চলে প্রজ্বলিত করে গেছেন, তার ঋণ শোধ করার মতো নয়। তিনি বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
জন্ম : শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. মুজাম্মিল আলী ১৯৪৫ ইং সনের ২রা জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দাসের বাজারের টুকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুজাম্মিল আলীর বাবা মো. আমির আলী নিজ গৃহস্থীর দেখভাল করতেন। মা মোছা. ফুলেছা বেগম গৃহিনী। ২ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে মুজাম্মিল আলী সবার বড়।
শিক্ষা জীবন: মো. মুজাম্মিল আলী প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে। ওই স্কুল থেকে তিনি ৩য় শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর বারইকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৬২ ইং সনে অনুষ্ঠিত মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৫ ইং সনে এইচএসসি পরীক্ষায় মৌলভীবাজার কলেজ থেকে ২য় বিভাগে পাশ করেন। ১৯৬৮ ইং সনে সিলেটের মদন মোহন কলেজ থেকে বি.কম ৩য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এছাড়া তিনি কুমিল্লা টিচার ট্রেনিং কলেজ থেকে ১৯৭৮ ইং সনে ২য় বিভাগে বিএড সম্পন্ন করেন।
শিক্ষকতা : তিনি ১৯৬৮ইং সনে হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং শিক্ষকতাকে পেশা নির্বাচন করে জীবনের পথচলা শুরু করেন। ১৯৮২ইং পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সুনামের সাথে পালন করেন। এরপর ১৯৮২ ইং সন হতে ১৯৯২ইং সন পর্যন্ত বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এর মধ্যে ৯ বৎসর অত্যন্ত সুনামের সাথে বিয়ানীবাজার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ইং সন হতে ১৯৯৫ইং সন পর্যন্ত দাসের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৫ইং সনের শেষ দিকে ভ্রমন ভিসায় আমেরিকা চলে যান এবং ৬ বৎসর থাকেন। ২০০২ সালের মে মাসে দেশে ফিরে আসেন। আদর্শ ও নীতির মূর্তপ্রতীক মো. মুজাম্মিল আলী ২০১৪ইং সনের ১৩ই মার্চ ইন্তেকাল করেন।
বর্ণাঢ্য জীবন : শ্রদ্ধেয় মো. মুজাম্মিল আলী বাড়ী থেকে হাকালুকি স্কুলে যখন চাকুরী করেছেন, তখন কোন রাস্তা-ঘাট ছিল না। ক্ষেতের আইল দিয়ে প্রায় ৭ মাইল হেঁটে স্কুলে যেতেন। লুঙ্গি পরে প্যান্ট-পায়জামা হাতে করে নিতেন। কাঁদা ও পানি যুক্ত রাস্তা পার হয়ে স্কুলে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করতেন।
তিনি বিদ্যালয়ে পৌঁছে স্কুল টাইমের আগে প্রাইভেট পড়াতেন, ছুটির পরও প্রাইভেট টিউশনির পর বাড়ি ফিরতেন। কুড়ার বাজার স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে থাকাকালীন লাউঝারীর দেওয়ান বাড়িতে লজিং থাকতেন। এই বাড়ীটি চোখ ধাঁধানো লন্ডনী বাড়ি। এই বাড়িতে ছয় বছর ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর ছেলেমেয়েদেরকে পড়ালেখা করানোর জন্য আকাখাজন গ্রামের বড় বাড়িতে একটি ঘরে থাকতেন; সেখানে ছয় বছর থাকার পর নিজ এলাকা দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে চলে আসেন।
মুজম্মিল আলী শিক্ষকতা জীবনে ঝরেপড়া ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বিশেষ নজর দিতেন। এ অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন। যারা প্রিটেস্ট ও টেস্টে আটকে পড়তো তাদেরকে বাড়িতে এনে পড়িয়ে এসএসসি পাশ করাতেন। অনেক ছাত্র পড়া বাদ দিয়ে ভবঘুরে হয়ে যেত তাদেরকে ধরে ধরে ভর্তি করাতেন এবং নিজে অংক, ইংরেজী পড়াতেন। এতে তারা পাশ করতো।
যার দারুন এই শিক্ষকের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের ছিল অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধা। হাকালুকি অঞ্চলে এই শিক্ষকের শতশত ছাত্রছাত্রী প্রাইমারী, হাইস্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতো। এখনও করতেছে। যাদের মধ্যে বেশীর ভাগ দুনিয়া মিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। এছাড়া অনেক ছাত্রছাত্রী দেশে-বিদেশে উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত আছেন।
মো. মুজাম্মিল আলী খুব সৌখিন লোক ছিলেন। খুব পরিপাটি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতেন। তিনি সবসময় কালো রঙের জুতা পরতেন। ৬ ফুট উচ্চতার লোক ছিলেন। যার দরুন তাকে সবসময় একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাই মনে হতো। স্কুলে ছাত্র-শিক্ষক কর্মচারী সবাই অসাধারণ শ্রদ্ধা করতো। সর্বোপরী একজন ধার্মিক লোক ছিলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। ছাত্রছাত্রীদের নামাজের তাগিদ দিতেন।
প্রাক্তন ছাত্রদের স্মৃতিচারণ : শিক্ষক মোজাম্মেল আলী স্যারের ব্যাপারে স্মৃতিচারণ করতে তাঁর ছাত্র বিজয় ভূষণ দাস অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, প্রথমেই মনে পড়ে তাঁর সুন্দর ব্যক্তিত্ব। স্যার ছিলেন লম্বা দোহারা ছিমছাম চেহারার মধ্য বয়সি একজন দর্শনীয় ব্যক্তি। শিক্ষক হিসাবে স্যার ছিলেন আদর্শবান মানুষ। তিনি প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে অন্তর দিয়ে ভালবাসতেন। তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। স্যার ছিলেন কমার্স গ্রাজুয়েট। ইংরেজি এবং সাধারণ গণিতে তার পা-িত্য ছিল অসাধারণ। কমার্সের বিষয় পড়ানো ছাড়াও তিনি আমাদের পড়াতেন ইংরেজি এবং সাধারণ গণিত। আর তাঁর পড়ানোর স্টাইল-ই ছিল অসাধারণ। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সহিত আমাদের এই দুইটি বিষয় পড়াতেন। তার মতে, একজন শিক্ষকের ছাত্র হওয়ার সুযোগ পাওয়াতে নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করেন।
মো. মুজাম্মিল আলী কুড়ার বাজার হাইস্কুলে যখন প্রধান শিক্ষক ছিলেন তখন ক্লাস নাইনে ভর্তি হন বিয়ানীবাজার উপজেলার মুল্লাপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফারুক উদ্দিন। তিনি এই শিক্ষকের শিক্ষকতা জীবনের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বলেন, কুড়ার বাজার স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে থাকাকালীন লাউঝারীর দেওয়ান বাড়িতে লজিং থাকতেন মুজাম্মিল আলী স্যার। সেই বাড়ি ছিল আমার খালার বাড়ি। আমার খালাতো ভাই দেওয়ান হারিছ আলী। ওই বাড়িতে ২ বৎসর আমিও ছিলাম। আমি নাইন, টেন থাকার পর এখান থেকে চলে আসি। দু’তলা বাড়ি খালি ছিল। একজন খালাতো ভাই থাকতেন পরিবার নিয়ে। তারা বাড়িতে ২-৩ মাস থাকতেন। আবার চলে যেতেন। স্কুল থেকে আসার পর স্যারের সঙ্গে এক সাথে খাবার খেতাম। আবার রাতেও খাবার খেতাম এক সঙ্গে। স্কুল বন্ধ থাকলে স্যার বাড়ি চলে যেতেন। বিকাল বেলা বেশির সময় বাড়ির সামনে বড় পুকুর ঘাটে স্যার বসতেন। বসে তিনি অবজার করতেন এলাকার কোন ছাত্র কিভাবে চলাফেরা করছে। পরদিন স্কুলে ওই ছাত্রের ব্যাপারটা ক্লাসে তুলে ধরতেন। স্যার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করতেন। আমার ভালো লেখাপড়ার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। স্যার থাকতেন নিচের তলায় আর আমি উপর তলায় ড্রয়িং রুমের সাইটে এক রুমে। আমি বিকাল-রাত্রে বেলা যখন পড়তে বসি অনেক সময় স্যার আমাকে ডেকে এনে গল্প করতেন। আমার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর চার সপ্তাহ আগে আমাকে ইংরেজির উপর প্রশ্ন করেন। স্যার বললেন, তুমি কোন কোন অ্যাসোগুলো পড়ছো, কোনটার উপর আইডিয়া রাখছো। তখন স্যারকে আমি বেশ কয়েকটি নাম বলছি, এগুলোর উপর ধারণা আছে। স্যার বললেন, এগুলো দিয়ে তুমি পরীক্ষায় পাশ করতে পারবে না। বই পুস্তক নিয়ে তো খালার বাড়ি এসেছো। শুধু ঘুম আর খাওয়া খালার বাড়ি। ধুমধাম দৌঁড়ঝাপ করে ফুটবল খেলে তো হবে না। আমি কয়েকটা নাম বলি। আমার মনে আছে- এমইন লাইফ, ফ্ল্যাট ইন বাংলাদেশ সহ আরও ২/৩ টা। আমি বললাম, আপনার দোয়ায় আমি যে ৮/১০টা শিখছে এটা থেকে আসবে। তখন স্যার বললেন বই খাতা নিয়ে বাড়ি চলে যাবে পাশ করতে পারবে না। স্যারের সাথে আমার গভীর আন্তরিকতা গড়ে উঠে। আমরা যখন এসএসসি পরীক্ষা দেই। তখন সেন্টার ছিল বিয়ানীবাজার। আমরা সিট দেওয়ার কথা ছিল বিয়ানীবাজারের ছাত্রদের সাথে। কিন্তু আমাদের সিট দেওয়া হয়েছে লাউতা হাইস্কুলের ছাত্রদের সাথে। এনিয়ে স্যার অনেক ক্ষেপে ছিলেন।
তখনকার সময় সিলেট থেকে রেজাল্ট আসতে একটু দেরি হতো। কারন দুই ফেরি পার হয়ে আসতে হতো। বিয়ানীবাজার থানার রেজাল্ট নিয়ে আসতে সিলেট যান মুজাম্মিল আলী স্যার। রেজাল্ট আসতে আসতে রাত ৯টা বেজে যায়। স্যার সিলেট থেকে রেজাল্ট নিয়ে আসার পথে লম্বা মানুষ বাসে উঠার সময় মাথায় চট লাগে। এরপর তিনি ওষুধপত্র লাগান। রেজাল্ট শিট যখন খোলা হয়েছে তখন সারা বিয়ানীবাজার থানার মধ্যে ৯টি ফার্স্টক্লাশ আসে। এর মধ্যে কুড়ারবাজার হাইস্কুল পেয়েছে ৫টি। বাকী ৪টা সারা থানায়। রেজাল্টের জন্য সেই সময় উপস্থিত ছিলেন জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব আজির উদ্দিন স্যার। তিনি যখন শুনলেন জলঢুপ স্কুলের রেজাল্টের চেয়ে কুড়ার বাজার ভাল করেছে তখন তিনি কুড়ারবাজার স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বললেন. মুজাম্মিল আমি তোমার কাছে হেরে গেলাম। সেই সময় মুজাম্মিল স্যার আজির উদ্দিন স্যারকে পায়ে ধরে সালাম করে বললেন, স্যার আপনি হারেন নাই আপনার ছাত্র মুজাম্মিলের এই সম্মান আপনার প্রাপ্তি আমার নয়। উল্লেখ্য, মুজাম্মিল আলী স্যার সরাসরি আজির উদ্দিন স্যারের ছাত্র। সেই সময় রেজাল্ট নিতে আসা বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তখন সবাই গুনী শিক্ষকদের এই দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সেই সময় প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক চাইতেন তাদের স্কুল সবচেয়ে ভাল রেজাল্ট করবে। শিক্ষকদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা ছিল। মুজাম্মিল আলী স্যারের সময়ে তিনি কুড়ারবাজার স্কুলকে সেই জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন।
নীতিতে অটল : একজন শিক্ষক হিসেবে যেসব গুণাবলী থাকার কথা সবগুলোই এই শিক্ষকের ছিল। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে নীতির প্রশ্নে তিনি অটল ছিলেন। ফলে তার সব ছাত্রছাত্রীর কাছে ছিলেন আদর্শ শিক্ষক। বিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মকান্ডে তার ওপর বিদ্যালয় প্রশাসনের ছিল গভীর আস্থা ও নির্ভরতা। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের সাথে যে আচারণ, স্কুলের ডিসিপ্লিন অত্যন্ত উন্নত মানের। তিনি সকাল ৮টার আগেই নাস্তা করে ঘুরতে বের হতেন। সব শিক্ষকের আগে তিনি স্কুলে পৌঁছাতেন। প্রধান শিক্ষকের রুমের সামনে, কোন সময় রুমের ভেতরে পর্দা তুলে বসে থাকতেন। দেখতেন কোন টিচার কোন সময় ঢুকছেন। কোন কোন সময় স্কুলের গেইট খুলে দেখতেন ছাত্ররা স্কুলে আসছে কিনা। প্রায় সময় স্কুলের বারান্দা হেঁটে হেঁটে দেখতেন কোন টিচার ক্লাশ মিস করছেন কিনা। কোন টিচার ক্লাশ মিস করলে কমনরুম থেকে অন্য টিচার ডেকে ওই ক্লাসে ক্লাস নেওয়ার জন্য পাঠাতেন। সহকারী শিক্ষক সালেহ আহমদ স্যার সেই সময় কুড়ার বাজার স্কুলের ইংরেজী শিক্ষক ছিলেন। সালেহ আহমদ স্যার মুজম্মিল আলীর স্যারের ক্লাসমেট। কিন্তু দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন প্রধান শিক্ষক। স্কুলের ভেতরে মুজম্মিল আলী স্যার ছিলেন খুব নীতিবান। তিনি ক্লাসে গিয়ে কোন ছাত্রের শার্টের বোতান খোলা পেতেন তাহলে তাকে দাঁড় করিয়ে বলতেন বোতান লাগাও। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলতেন, কোন টিচারও যদি শার্টের বোতান খুলে ক্লাসে ঢুকছেন তাহলে গা থেকে শার্ট খুলে টেবিলের উপরে রেখে আমাকে বলবে। এ ধরনের আদর্শ শিক্ষকের মধ্যে ছিল। খুব দায়িত্বশীল একজন মানুষ ছিলেন তিনি। এই শিক্ষক, বাংলা, ইংলিশ, অংকে অনেক ট্যালেন্ট ছিলেন। তাঁর শিক্ষকতা জীবন খুবই সফল ও স্বার্থক ছিলো।
পারিবারিক : গুণী শিক্ষক মো. মুজাম্মিল আলী শিক্ষার্থীকে যেভাবে মানুষ করেছেন, তেমনি করে নিজ সন্তানদেরকেও যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। তিনি ৬ ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। বড় ছেলে ছালেহ আহমদ (সেলিম)-বি,এ. সি.ইন. এড.। বর্তমানে তিনি টুকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরিরত। ২য় ছেলে সুহেল আহমদ, বিএ। ৩য় ছেলে মাওলানা কবির আহমদ, এম, এ, কামিল, বিএড- সহকারী শিক্ষক, শাহজালাল আদর্শ গার্লস হাইহাই স্কুল, শাহজালাল উপশহর, সিলেট। ৪র্থ ছেলে মারুফ আহমদ- বি, এস,সি, বি, এড-সাবেক শিক্ষক, বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। ৫ম ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম, এম এ- রেভিনিউ অফিসার, কাষ্টমস এক্সাইজ ভ্যাট। ৬ষ্ঠ ছেলে তোফায়েল আহমদ সুমন, বিএ, অনার্স, এমএ, সহকারী অধ্যাপক (ফিশারীজ) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট। তিনি প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। একমাত্র কন্যা লায়লা জান্নাত পারভীন -গৃহিনী।
শ্রদ্ধেয় মো. মুজাম্মিল আলী কর্মজীবনে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য নিরন্তর নিজেকে প্রস্তুত রাখেন। দীর্ঘ ২৭ বছর শিক্ষার মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। শিক্ষকতা পেশার প্রতি অনেক বেশি দায়িত্বশীল ও নীতে অটুট ছিলেন। এই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নানাভাবে অনুপ্রেরণা দিয়ে তাদের জীবন প্রভাবিত করেন। শ্রদ্ধেয় মো. মুজাম্মিল আলী কর্মজীবনে অনেক শিক্ষার্থীকে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তারা দেশের কল্যাণে অনেক বড় বড় জায়গা থেকে ভূমিকা রাখছেন। তিনি তার শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজের কাজের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আজীবন। তাঁর পরকালীন জীবন শান্তিতে কাটুক সেই আর্শিবাদ করছি।
লেখক: সাউথইস্ট লন্ডন নিউজ করেসপনডেন্ট, চ্যানেল এস টেলিভিশন, লন্ডন।
এসএ/সিলেট