পর্যটকদের জন্য সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে গোয়াইনঘাটের দামারি বিল

post-title

ছবি সংগৃহিত

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভুমি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা। পুরো উপজেলাটাই যেন পর্যটন কেন্দ্র। উপজেলার যে দিকেই ভ্রমন করবেন প্রকৃতি প্রেমীদের মন ছুয়ে যাবে।

রাতারগুল, প্রকৃতি কন্যা জাফলং, জল পাথরের বিছনাকান্দি, জলপ্রপাতের পান্তুমাই, জাফলং মায়াবতী ঝর্ণা,মায়াবন পিকনিক স্পটের পাশাপাশি উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের সালুটিকর বাজার সংলগ্ন দামারি বিল।

এ পর্যটন কেন্দ্রকে অনেকে বলেন দামারি বিল, কেউ কেউ নাম দিয়েছেন আরেক রাতারগুল। ছোট বেলা থেকেই এই বিলের জলে পা ভিজিয়েছি, শতবার পুরো হাওর ঘুরে দেখেছি। শুকনা মৌসুমেও মোটরবাইক নিয়ে হাওরের মাঝখানে গিয়েছি অনেকবার। শুষ্ক কিংবা বর্ষায় দামারির রূপের যেন শেষ নেই। তাই হাওরকে এবার দেখতে চাইলাম অন্য চোখে, অন্যভাবে।

সিলেটের গোয়াইনঘাটের শতবর্ষী সালুটিকর বাজারের পাশেই দামারি হাওর। যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ সহজ। শহর থেকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক ধরে মাত্র ১৫ কিলোমিটার গেলেই সালুটিকর বাজার। পাশেই দামারি।

বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে চেঙ্গেরখাল নদী, যার একটি খাল হাওরটির সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বর্ষায় ঢল কিংবা ভারীবৃষ্টির পানি উপচে সালুটিকর বাজারে এসেও পড়ে। হাওর লাগোয়া কয়েকটি বাড়িও রয়েছে। সালুটিকর বাজারে রয়েছে একটি তিনতলা বাণিজ্যিক ভবন। তিনতলা ভবনের ছাদের ওপরে উঠে দাঁড়ালেই দামারী বিলের ছড়িয়ে থাকা জলরাশি আর সবুজের বিশাল বিস্তারে প্রকৃতিপ্রেমীদের চোখ আটকে যাবে।

হাওরের বিস্তৃত জলরাশি যেন স্বচ্ছ পানির এক রাজ্য। বর্ষার নতুন পানি বুকে ধরে রেখেছে দামারি। স্বচ্ছ পানিতে হাওরটা যেন নতুন রূপ পেয়েছে হিজল আর করচগাছের ঘন সবুজে আচ্ছাদিত। স্বচ্ছ পানিতে গাছগুলো অনেকখানি ডুবে রয়েছে। আগের চেয়ে বড় ও ঘন হওয়া কিছু গাছ চারদিকে ডালপালা ছড়িয়ে আছে, পাতাগুলো বাতাসের সঙ্গে দুলছে। ছাদ থেকে মনে হয়  পুরো হাওর যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস যেখানে হিজল ও করচগাছের ডালপালা আঁকছে বর্ষার জলছবি। চেনা দামারির এ যেন অদেখা রূপ।

বর্ষায় এই হাওরে মাছ ধরেন এলাকার মানুষ আর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে করেন বোরো চাষ। নৌকায় করে হাওরে ঘুরে বেড়ানোটা দারুন উপভোগ্য। বর্ষায় পড়ন্ত বিকেলে হাওরের জলে আকাশের ছায়া, মেঘের আনাগোনা, পাখির ওড়াউড়ি আর একটু দূরে মেঘালয়ের সবুজে মোড়ানো পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে ঝরনার রেখা, সব মিলিয়ে অপরূপ এক সৌন্দর্য।

হাওরের পাশের কিছু ঘরবাড়ি গাছপালায় ঢেকে আছে। নীরব হাওরে নৌকা চলাচল তেমন নেই। স্থানীয় লোকজন ছোট ছোট নৌকায় এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যাতায়াত করছেন। কেউ আবার সেই নৌকা দিয়ে হাওরে মাছ ধরছেন। এ দৃশ্যগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, প্রকৃতি আর হাওরপারের মানুষের সম্পর্ক কত ঘনিষ্ঠ!

এই বর্ষায় যদি গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি কিংবা কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরে যান, তাহলে পথে সময় করে দেখে নিতে পারেন দামারি হাওরের এই অপার সৌন্দর্য।

এসএ/সিলেট