আওয়ামী অপশাসন দেশের শিক্ষা...
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, বিএনপির কেন্দ্রীয় ফরেইন অ্যাফেয়ার্স টীমের সদস্য ও সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেছেন,...
১ম শাহাদাত বার্ষিকীতে জালালাবাদের আলোচনা সভা
ছবি সংগৃহিত
শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সকল পুলিশ কর্মকর্তাকে দ্রæত গ্রেফতার ও বিচার দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়েছেন সিলেটের সাংবাদিক নেতারা। তারা বলছেন, পুলিশ টার্গেট কিলিং করে তুরাবকে হত্যা করেছে। তুরাব হত্যার বিচারে সিলেটের সাংবাদিক সমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ।
সাংবাদিকদের নানা মত থাকতে পারে, কিন্তু পেশাগত জায়গায় সবাই এক। সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে হত্যার বিচার হবেই। ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সিলেটের সাংবাদিক সমাজ থেমে যাবে না। তারা বলেন, নষ্ট রাজনীতির চোরাগলিতে যেন তুরাব হত্যার বিচার হারিয়ে না যায়।
শনিবার বিকেলে দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার এটিএম তুরাবের ১ম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে দৈনিক জালালাবাদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তারা এসব কথা বলেন।
দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস-উন-নূরের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র রিপোর্টার মুনশী ইকবালে সঞ্চালনায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আহমেদ নুর, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির ইকু, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও দৈনিক নয়াদিগন্তের ব্যুরো চীফ আব্দুল কাদের তাপাদার, বাসসের ব্যুরো চীফ সেলিম আওয়াল, দৈনিক সংগ্রামের ব্যুরো চীফ কবির আহমদ, দৈনিক প্রভাতবেলা সম্পাদক কবির আহমদ সোহেল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যুরো চীফ শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (ইমজা) সাধারণ সম্পাদক সাকিব আহমেদ মিঠু, সিলেট বিভাগীয় ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল কবির পাভেল, দৈনিক আজকের পত্রিকার ব্যুরো চীফ ইয়াহইয়া মারুফ ও দৈনিক জালালাবাদের সাবেক সিনিয়র রিপোর্টার মুহিবুর রহমান প্রমুখ।
শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক জালালাবাদের সিনিয়র রিপোর্টার এমজেএইচ জামিল ও চীফ ফটো সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর লিটন। কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন দৈনিক জালালাবাদের গ্রাফিক্স ডিজাইনার সালমান আহমদ সোহেল। মোনাজাত পরিচালনা করেন এডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, সাংবাদিক এটিএম তুরাবকে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে হত্যা করা হয়েছে। যে আইন শৃংখলাবাহিনী নাগরিকদের সুরক্ষা দেবে, সেই পুলিশ পেশাগত দায়িত্বপালনকালে নিরস্ত্র নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে। এই হত্যা সুষ্পষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধ। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাবের হত্যাকারী ও নির্দেশদাতা সকল পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করতে হবে।
আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, জালিম শাসক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পুলিশ এটিএম তুরাবকে গুলি করে হত্যা করে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে হত্যা করেছে। সে জালিমের অন্যায়ের অপকর্মের সঠিক তথ্য তুলে ধরার সময় পেশাগত দায়িত্বপালনকালে নিহত হয়েছে। নি:সন্দেহে এটিএম তুরাব শহীদ। তিনি বলেন, আমরা সবাই তুরাব হত্যার বিচার দাবি করছি। কিন্তু আসামীকে গ্রেফতার করা যদি না হয়, তাহলে বিচার কিভাবে নিশ্চিত হবে। সকল আসামীকে অবশ্যই গ্রেফতার করতে হবে। তাদের সবাইকে যখন গ্রেফতার করা হবে, তখন বিচারের জন্য সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত হবে। তা না হলে তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা তাঁর স্মরণে কোনো স্মারক বা বই বের করছি না। এই স্মারক কিংবা বই যদি বের করা হয়, এটি ন্যায় বিচারে সহায়ক হবে। আজ থেকে ৫০ বছর পরও এটা কাজে লাগবে।
সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আহমেদ নুর বলেন, নষ্ট রাজনীতির চোরাগলিতে যেন তুরাব হত্যার বিচার হারিয়ে না যায়। তুরাব হত্যার বিচারে অযথা কালক্ষেপণ মেনে নেওয়া হবে না। বিলম্ব না করে যথাসময়ে বিচার সুনিশ্চত করতে হবে। তিনি বলেন, আজ তুরাব হত্যার বিচার দাবিতে সিলেটের সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ। তুরাব স্মরণে একটা পরিষদ গঠন করে আন্দোলন বেগবান করতে হবে। সাংবাদিকদের এই বন্ধন অটুট থাকলে বিচার নিশ্চিত হবে।
সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির ইকু বলেন, শহীদ সাংবাদিক তুরাব হত্যার বিচার দাবিতে সিলেটের সাংবাদিক সমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ। একবছর পার হয়ে গেল, কিন্তু এখনও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আগামী এক বছরের মধ্যে যাতে বিচার নিশ্চিত হয়, সেই লক্ষ্যে সাংবাদিক সমাজকে লড়াই করতে হবে।
সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও দৈনিক নয়াদিগন্তের ব্যুরো চীফ আব্দুল কাদের তাপাদার বলেন, গত ১০০ বছরের সিলেটের সাংবাদিকতার ইতিহাসে শাহাদাতবরণকারী সাংবাদিক এটিএম তুরাব। তুরাব হত্যার ৩৬৫ দিন পেরিয়ে গেছে, তদন্ত কার্যক্রম ট্রাইব্যুনালে এগিয়েছে, দ্রæত বিচার নিশ্চিত করে রায় কার্যকর করতে হবে।
সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, তুরাবকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কাজের সাথে বাস্তবতার ফারাক আছে। কথার সাথে যাতে কাজের মিল থাকে, এটা আমরা দেখতে চাই। আমরা আশাবাদী, তুরাব হত্যার বিচার দ্রæত করা হবে।
ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (ইমজা) সাধারণ সম্পাদক সাকিব আহমেদ মিঠু বলেন, আমার সহকর্মী তুরাব হত্যার বিচার চাই। যে পুলিশ আমার সহকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে, বিচার চাওয়ার মাধ্যমেই তা বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে, এটা অন্যায়।
সিলেট বিভাগীয় ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল কবির পাভেল বলেন, সংবাদকর্মীদের সমাজের কাছে দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে শহীদ তুরাব পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছে। দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এটিএম তুরাবকে। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের আন্দোলন চলবে।
সভাপতির বক্তব্যে দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন নূর বলেন, যারা মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা, তাদের হাতেই নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছে সাংবাদিক এটিএম তুরাব। তুরাবের শরীরে ৯৮টি স্প্রিন্টার পাওয়া গেছে, এটা টার্গেট কিলিং, এতে কোনো সন্দেহ নাই। তিনি বলেন, তুরাব পেশাগত দায়িত্বপালনকালে ১৯ জুলাই মারা গেছে, সে ১৫ জুলাই দৈনিক জালালাবাদে চিনি চোরাচালান নিয়ে একটি লিড নিউজ করেছে। সেই প্রতিবেদনে তৎকালীন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের কিছু কর্মকর্তার নাম এসেছে চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে। এটাও হয়তো হত্যার একটা কারণ হতে পারে। পুলিশ সুযোগ বুঝে কাজে লাগিয়েছে।
দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক বলেন, পুরো সাংবাদিক সমাজকে সুরক্ষিত করতে হবে। সাংবাদিক সমাজ সুরক্ষিত না থাকলে দেশ সুরক্ষিত থাকবে না। গণতন্ত্রের স্বার্থে তুরাব হত্যার দ্রæত বিচার সুনিশ্চিত করা জরুরী। তুরাব হত্যার বিচার যাতে দ্রæততম সময়ের মধ্যে হয়, এজন্য জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ট ড. এনামুল হক চৌধুরীকে বিএনপির হাই কমান্ডকে সহযোগিতার জানান। তুরাব স্মরণে একটি স্মারক বের করারও কথা জানান তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার দেশ’র সিলেট ব্যুরো প্রধান খালেদ আহমদ, জৈন্তাবার্তা সম্পাদক ফারুক আহমদ, সিলেট বাণীর নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল হান্নান, সবুজ সিলেটের মাল্টিমিডিয়া ইনচার্জ ফয়ছল আলম, ইমজার সাবেক সভাপতি ও চ্যানেল এস’র সিলেট প্রতিনিধি মইন উদ্দিন মনজু, ইমজার সাবেক সহ-সভাপতি আনিস রহমান, সাবেক সেক্রেটারী গোলজার আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও বাসসের সিলেট অফিসের রিপোর্টার শোয়াইবুল হাসান, সাংবাদিক মো. মুহিবুর রহমান, দৈনিক শ্যামল সিলেটের রিপোর্টর আতিকুর রহমান নগরী, সিলেট বিভাগীয় ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সেক্রেটারী আশকার আমিন লষ্কর ইবনে রাব্বি, দৈনিক আমার দেশ সিলেট অফিসের ফটো সাংবাদিক এইচএম শহিদুল ইসলাম, ফটো সাংবাদিক আজমল আলী, মাহমুদ হোসেন, চ্যানেল এস সিলেট অফিসের ক্যামেরাপার্সন শামিম আহমদ, দৈনিক জালালাবাদের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আহবাব মোস্তফা খান, অনলাইন ইনচার্জ মারুফ হাসান, বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপক নেছার আহমদ, কম্পিউটার অপারেটর সাদিকুর রহমান সোহেল ও পান্না লাল রায় প্রমুখ।
এসএ/সিলেট