শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাবের বিচারের দাবিতে ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের স্মারকলিপি প্রদান

post-title

ছবি সংগৃহিত

জুলাই গনঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার এবং ও দ্রুত বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক এর মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

রোববার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ এর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট প্রেকক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি নাজমুল কবীর পাভেল, সিনিয়র সহ সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন, সাধারণ সম্পাদক আশকার ইবনে আমীন লস্কর রাব্বী, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রেজা রুবেল, নির্বাহী সদস্য আজমল আলী, সাবেক কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হোসেন, মালটিমিডিয়ার জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সিলেট’র সদস সচিব এইচ এম শহীদুল ইসলাম।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই বাদ জুমআ পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান করছিলেন সিলেট প্রেসক্লাব সদস্য, স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদের ফটো সাংবাদিক এটিএম তুরাব। নামাজ শেষে তুরাব অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলের মিছিলের স্থিরচিত্র ও ভিডিওগ্রাফি করছিলেন। মিছিলটি পুরান লেন গলির মুখে পৌঁছার পর সশস্ত্র পুলিশ পেছন দিক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে অনেকে গুলিবিদ্ধ হন এবং ছবি তুলতে থাকা এটিএম তুরাবও গুলিবিদ্ধ হন। প্রসঙ্গত, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ইংরেজিতে বড় অক্ষরে PRESS লেখা ভেস্ট তুরাবের গায়ে ছিল। তা সত্ত্বেও পুলিশ তার দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে।

গুলিবিদ্ধ তুরাব চিৎকার করে মাটিতে পড়ে গেলে অন্য সহকর্মীরা তাকে দ্রুত সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় এবং তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নগরের সোবহানীঘাট এলাকায় অবস্থিত ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টা ৪৪ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ময়না তদন্তে তাঁর শরীরে ৯৮টি ছররা গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে ফরেনসিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। এ ঘটনায় গত বছরের ২৪ জুলাই সাংবাদিক তুরাবের বড় ভাই আবুল হাসান মো. আযরফ (জাবুর) এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানায় ৮-১০ জন পুলিশকে অভিযুক্ত করে এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু কোতোয়ালি থানা পুলিশ সেটিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করে।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ১৯ আগস্ট ২০২৪ সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মোমেনের আদালতে এটিএম তুরাব হত্যার ঘটনায় ফের মামলা দায়ের করেন সাংবাদিক এটিএম তুরাবের ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর)। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় ২ নম্বর আসামি অতিরিক্ত উপকমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউসার, ৩ নম্বর আসামি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ, ৪ নম্বর আসামি সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান।

অন্য আসামিরা হলেন- সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানার বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন, ওসি (তদন্ত) ফজলুর রহমান, থানার এসআই কাজি রিপন সরকার, এসএমপির কনস্টেবল/২১৬৮ সেলিম মিয়া, কনস্টেবল/১৯৫৭ আজহার, কনস্টেবল/২২৫৫ ফিরোজ, কনস্টেবল/১৬০৩ উজ্জ্বল।

বিগত সরকারের অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন ও বিচারহীনতায় বাংলাদেশের মানুষ এতদিন আতঙ্কে-উৎকণ্ঠায় তটস্থ ছিল। মানুষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত ছিল। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশের বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষ আজ ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় অধির আগ্রহে রয়েছে।

আমরা বিশ্বাস করি, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে মানুষ তার ন্যায়বিচার পাবে, শান্তিতে বসবাস করবে।

একইসাথে আমরা আপনার মাধ্যমে আমাদের সহকর্মী হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে আপনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কামনা করছি।

এসএ/সিলেট