হুমায়ুন কবির সিলেট থেকে নির্বাচন...
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন...
সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন
ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশের ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এই নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে সরব আলোচনা শুরু হলেও সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসন এখন বিশেষভাবে আলোচনায়। কারণ, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এবং কর্মীদের আস্থার জায়গায় পৌঁছানো—এসব কারণে মিলন বর্তমানে বিএনপির জন্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু ছাত্র রাজনীতি থেকে। পরবর্তীতে তিনি ধাপে ধাপে জাতীয় রাজনীতির মূলধারায় প্রবেশ করেন। সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে তিনি একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তিনি এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখেন।
তৃণমূল থেকে উঠে আসা মিলন সবসময় মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বিশেষ করে বিরোধী আন্দোলনের সময়ে তার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত ও অনুপ্রাণিত করা—সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অগ্রসৈনিক।
বর্তমানে কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা রয়েছে। তবে মামলা-হামলার ভয় তাকে দমাতে পারেনি। বরং তিনি আরও দৃঢ় হয়ে রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মামলা-হামলা নতুন কিছু নয়। বরং এগুলো অনেক সময় নেতাদের আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
একজন স্থানীয় ভোটার বলেন, “মিলন ভাই মামলা-হামলার ভয় করেন না। তিনি সবসময় আমাদের পাশে থেকেছেন। তাই আমরা চাই, তিনি আবারও সংসদে ফিরে আসুন।”
ছাতক ও দোয়ারাবাজারের বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনই এ আসনে দলের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী।
ছাতক পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামছুর রহমান বাবুল বলেন, “মিলন ভাই সবসময় কর্মীদের পাশে থাকেন। তার নেতৃত্বে আমরা সংগঠিত হয়েছি।”
এছাড়া স্থানীয় যুবদল, শ্রমিক দল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারাও দাবি করছেন—তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, ত্যাগী চরিত্র এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা তাকে তৃণমূলের আস্থার প্রতীকে পরিণত করেছে।
রাজপথের রাজনীতির পাশাপাশি গণমাধ্যমেও সক্রিয় ছিলেন মিলন। টেলিভিশনের টকশোগুলোতে তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার ছিলেন। তার স্পষ্টভাষী বক্তব্য ও বিশ্লেষণমূলক উপস্থাপনা তাকে সাধারণ ভোটারদের কাছেও জনপ্রিয় করে তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাহসী ও যুক্তিনির্ভর বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি জাতীয় পর্যায়েও পরিচিত মুখে পরিণত হয়েছেন।
ছাতক-দোয়ারাবাজার দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত। সড়ক যোগাযোগের দুরবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি, স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা এবং কর্মসংস্থানের অভাব এখানকার মানুষের প্রধান সমস্যা।
একজন তরুণ ভোটার বলেন, “আমরা চাই এমপি শুধু দলীয় রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে এলাকার উন্নয়নে কাজ করুন।”
অন্যদিকে এক প্রবীণ ভোটার বলেন, “ছাতক-দোয়ারাবাজারের উন্নয়নের অনেক জায়গা রয়েছে। আমরা এমন একজন প্রার্থী চাই, যিনি আমাদের সমস্যা বুঝবেন এবং সমাধান করবেন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্থানীয় ও কেন্দ্রীয়—উভয় পর্যায়ে কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ইতিমধ্যেই শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের জোরালো দাবি এবং দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনে এখন পুরোপুরি নির্বাচনী আবহ বিরাজ করছে। সাবেক এমপি মিলন তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, সাহসী ভূমিকা এবং তৃণমূলের আস্থা পুঁজি করে বিএনপির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। মামলার ঝড় কিংবা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা—কিছুই তাকে দমাতে পারেনি, বরং তাকে আরও দৃঢ় করেছে কর্মী-সমর্থকদের চোখে।
এখন প্রশ্ন একটাই—বিএনপি শেষ পর্যন্ত কাকে মনোনয়ন দেবে? আর নির্বাচনী মাঠে কে ভোটারদের সামনে সবচেয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে হাজির হবেন?
যাই হোক, ছাতক-দোয়ারাবাজারের সাধারণ মানুষ উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও জীবনের সমস্যার সমাধান চান। তাই আগামী নির্বাচনে ভোটাররা শুধু দল নয়, উন্নয়ন ও যোগ্য নেতৃত্বকেই প্রাধান্য দেবেন—এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এসএ/সিলেট