দলীয় পদ ফিরে পেলেন বিএনপি...
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনকে প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদের স্থগিততাদেশ প্রত্যাহার করেছে দলটি। পদ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য...
কোমরবেঁধে মাঠে রয়েছে তৃণমূলের কর্মী
দলীয় প্রার্থী নিয়ে নির্বাচন করার জন্য একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার বিএনপি। তারা দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম সহ সভাপতি মামুনুর রশীদকে (চাকসু মামুন) নিয়ে প্রতিদিন নির্বাচনী সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষও স্বত:স্ফ‚র্তভাবে তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সহযোগিতা করছে। মামুনুর রশীদ(চাকসু মামুন) এ আসনে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে মাঠে রয়েছেন।
সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট নিয়ে সংসদীয় আসন সিলেট-৫ গঠিত। এ আসনে সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রæয়ারীর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পেয়েছিল জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের বিএনপি। এরপর আর ভাগ্যে জোটেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম সহ সভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন) কিন্তু জোটের শরীকদলের সঙ্গে আসন ভাগ-বাটোয়ারায় তার কপাল পুড়েছিল। দলের সিদ্ধান্তে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তখন হতাশ হয় তৃণমূলের কর্মীরা। কিন্তু এবার তারা কোনো ভাবেই ছাড় দিতে রাজি নয়, যেকোনোমূল্যে ধানের শীষে ভোট দিতে চান। আর এজন্য কোমরবেঁেধ মাঠে নেমেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ৩ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ২৩৭টি আসনের একটি তালিকা ঘোষণা করেন। এ তালিকায় সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। আর বাকি দু’আসন সিলেট-৪ ও ৫ পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে বলে মহাসচিব জানান। এই অবস্থায় তিন দিনের মধ্যে কেন্দ্র থেকে সিলেট-৪ আসনের সিদ্ধান্ত আসে। এ আসনে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ঝুলিয়ে রাখা হয় সিলেট-৫। এতে অনিশ্চয়তা ও হতাশায় ভুগছেন দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিবের নির্দেশনায় ভোটের মাঠে প্রচারণায় রয়েছেন এমন দাবি করেছেন মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন)। তিনি বলেন, প্রায় তিন মাস আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে অর্ধ ঘন্টার বেশি ফোনে কথা বলেছেন। এসময় তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। একদিনের জন্যও কার্যক্রম বন্ধ রাখিনি। আমার বিশ^াস দল এ অঞ্চলের নেতাকর্মীর ত্যাগ ও আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।
সূত্র আরও জানায়, এ আসনে গত কয়েক বছর ধরে মাঠে অনেকটা একতরফা আলোচনায় ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম সহ সভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন)। তবে এখন ভোটের মাঠে তাঁকে ‘ঠেক্কা দিতে’ প্রচারণায় রয়েছেন জামায়াতে ইসলাম সিলেট জেলার নায়েবে আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসেন খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, খেলাফত মজলিসের সিলেট জেলার উপদেষ্টা মুফতি আবুল হাসান। তাঁরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে আগ্রহী। এ কারণে তাঁরা এবং তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচনী এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে নানা ধরনের অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
এদিকে, বিএনপি নেতা চাকসু মামুনও দলের ৩১ দফা কর্মসূচিসহ স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ভোটারের কাছে ছুটছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নদী ভাঙ্গন সহ এলাকার বিভিন্ন সমস্যার নিরসনের দাবিতে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। এছাড়া প্রতিদিন রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান উপেক্ষা করে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও কর্মীসভা,উঠান বৈঠক,জনসভা ও বিভিন্ন পেশাজীবিদের সাথে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক ও গণ সংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। চাকসু মামুনের সমর্থকেরা বলছেন, মামুনুর রশীদ সৎ, দক্ষ, দায়িত্বশীল ও জনবান্ধব নেতা হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য।
জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন সেলিম বলেন, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলের মানুষ বিএনপিকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। নতুন প্রজন্ম ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়নি, সাধারণ মানুষ বিএনপি করা ভুলে যাবে। এবার যেকোনো পরিস্থিতিতে দলের প্রার্থী দিতে হবে। এ দুইনেতা আরও বলেন,গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে বিএনপি থেকে প্রাথমিক অবস্থায় দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত হন সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম সহ সভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন)। পরে অবশ্য হাইকমান্ডের নির্দেশনায় জোটের স্বার্থে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর জোটের শরীক দলের প্রার্থী এখান থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেন।
এদিকে, বারবার জোটের শরীকদের আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ রয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। যার কারণে এবার নির্বাচনী জোটহলেও এ আসনটি ছাড়তে রাজি নন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি হলো বার বার জোটের জন্য ছাড় দেওয়ায় দল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বিএনপিকে রক্ষা করতে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার জোর দাবি জানান সিলেট জেলা বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হাজী শরীফুল হক, যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্ঠা অধ্যাপক জাকি মোস্তফা টুটুল, জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমদ, কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খসরুজ্জামান পারভেজ ও কোষাধ্যক্ষ আবুল বাশার। তারা বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা প্রমাণ করবো জকিগঞ্জ-কানাইঘাট হলো বিএনপির দুর্গ। অনেক ত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে বিএনপিকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে এ অঞ্চলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১১২টি মামলা হয়েছিল। এসব মামলা ও শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতনে কর্মীরা যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন চাকসু মামুন। তিনি ঝুঁকি নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দলের এমন পরীক্ষিত নেতাকে হাইকমান্ড অবশ্যই মূল্যায়ন করবে।
ঠিক একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রুহুল আমিন, স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম ও শ্রমিকদলের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ। তারা বলেন, দল যদি চাকসু মামুনকে ধানের শীষের প্রার্থী ঘোষণা করে তবে আমরা সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়ে তারেক রহমানকে এ আসন উপহার দিব।
কাওছার আহমদ