দোয়ারাবাজার সীমান্তে ১৪ ভারতীয় গরু...
সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) এর অধীনস্থ বাঁশতলা বিওপি'র টহলদল চোরাই পথে আসা ১৪টি ভারতীয় গরু জব্দ করেছে।মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে সীমান্ত পিলার...
অভিযান চলছেই, তবু থামছে না ইয়াবা–ফেনসিডিলের প্রবাহ
ছবি সংগৃহীত
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্ত এখন মাদকের অন্যতম প্রধান রুটে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ভারত থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, মদসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য পাচার হয়ে আসছে দেশের ভেতরে। বিজিবি ও পুলিশের নিয়মিত অভিযান, বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ এবং গ্রেপ্তার অভিযানের পরও বন্ধ হচ্ছে না এই অবৈধ বাণিজ্য।
স্থানীয়রা বলছেন, উঠতি বয়সী তরুণ–তরুণী ও শিক্ষার্থীরাই এখন মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছে সবচেয়ে বেশি। এতে সীমান্তজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক।
দোয়ারাবাজার থানার তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ নভেম্বর রাতে উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ১৪২ পিস ইয়াবা ও ১০০ গ্রাম গাঁজাসহ এক নারীসহ তিনজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। এর আগে ৩০ অক্টোবর শান্তিপুর এলাকা থেকে ৩০৫ পিস ইয়াবাসহ এক নারী কারবারি ধরা পড়ে।
আরও আগে টিলাগাঁও এলাকা থেকে পুলিশ জব্দ করে ৬৩ বোতল ভারতীয় মদ—তবে কাউকে আটক করতে পারেনি।
এছাড়া ৪৮ বিজিবির বাংলাবাজার বিওপি ক্যাম্পের নিয়মিত অভিযানে প্রতি সপ্তাহেই জব্দ হচ্ছে অর্ধলক্ষাধিক টাকার মাদক ও চোরাই পণ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দোয়ারাবাজারের নরসিংপুর, সুরমা, বোগলাবাজার, বাংলাবাজার ও লক্ষিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট এখন মাদক প্রবেশের প্রধান পথ। এসব রুটের মধ্যে শ্যামারগাঁও, শ্রীপুর, চাইরগাঁও, কলাউড়া–শিমুলতলা, বাঁশতলা ও পেকপাড়া এলাকা সবচেয়ে সক্রিয়।
মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজি ও ইজিবাইক—যার বেশিরভাগেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় এসব কারবার নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মাদকবিরোধী অবস্থান নিলে হুমকি ও হয়রানির শিকার হতে হয়। কেউ কেউ সাজানো মামলার ভয়েও চুপ থাকেন।
ইউপি সদস্য আল আমিন বলেন, আমি মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম, এজন্য আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এরপর থেকে অনেকেই ভয় পেয়ে মুখ বন্ধ করে ফেলেছেন।
দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, মাদক ও চোরাচালান দমনে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। জনগণ সহযোগিতা করলে মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
অন্যদিকে সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাজমুল হক বলেন, সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। মাদক নির্মূলে বিজিবি নিরলসভাবে কাজ করছে, তবে জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এটি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু পুলিশ বা বিজিবির অভিযান যথেষ্ট নয়। মাদক নির্মূলে প্রয়োজন প্রশাসনের দুর্নীতি রোধ, তথ্য ফাঁসের দায়ীদের শাস্তি, স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সীমান্তজুড়ে আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা।
দোয়ারাবাজার সীমান্তের মাদকপ্রবাহ যদি এখনই রোধ না করা যায়, তবে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতের ওপর। এখনই সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে, সীমান্তের এই “লাল সংকেত” একদিন পুরো দেশকে গ্রাস করতে পারে।
টিএ/ছাতক