তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে খরার কবলে মৌলভীবাজার জেলার চা শিল্প

post-title

ছবি সংগৃহিত

তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে খরার কবলে পড়েছে মৌলভীবাজার জেলার চা শিল্প, উৎপাদন ব্যহত হবার আশংকা।  অনাবৃষ্টি ও তাপদাহে মরে যাচ্ছে চা-গাছ। বিশেষ করে ইয়াং টি মারা যাচ্ছে বেশি।

এছাড়াও গরমের কারণে চা বাগানগুলোতে রেড স্পাইডারের আক্রমনসহ নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। চা বোর্ড সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে (২০২৫) ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের  লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও চা পাতা  উত্তোলনে মৌসুমের শুরুতেই বিপর্যয়ের ফলে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, বৃষ্টি না হওয়ায় গ্রুনিং (ছাটাই) করা চা গাছে নতুন কুঁড়ি গজাচ্ছে না। ফলে চা গাছ থেকে পাতা উত্তোলন করা যাচ্ছে না। চা বোর্ড সূত্র বলছে ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি ২০২৫ সালের নতুন চা মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ গত জানুয়ারি মাসে ৩০ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।

শ্রীমঙ্গর আবহাওয়া পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের অবজাভার মো. মুজিবুর রহমান জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২০২৪ সালের একই সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ৪৬মিলিমিটার। তিনি আরো জানান, গত সোমবার এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, মাসিক বৃষ্টিপাত ১০০ মিলিমিটারের কম হলে চা গাছ খড়ায় টিকতে পারে না।

চা চাষের জন্য তাপমাত্রা ১৮-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০০০ মি.মি. এর উপরে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান অর্থাৎ আর্দ্রতা ৭০-৯০% আদর্শহিসেবে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে গেলে উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয় এবং ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে গেলে উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষণ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

খরার কারনে প্রস্বেদনের মাধ্যমে যেমন গাছের উপরিভাগ হতে পানি হ্রাস পায় তেমনি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে মাটির উপরিভাগ হতেও পানি বাষ্পীভূত হয়। অর্থাৎ এ সময়ে খরার প্রভাবে চা গাছ  নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি ১০০ সেমি. চা গাছের উপরিভাগ হতে ঘন্টায় গড়ে প্রায় ১.১৫ গ্রাম পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায়।

এতে করে চা বাগানে নতুন করে পাতা গজায় না, উল্টো অতি খরায় চায়ের পাতা শুকিয়ে যায়। পাশাপাশি মাটির আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় চা গাছের পাতা গজানো কমে যায়। বৃষ্টির অভাবে খরা প্রবণ এলাকার চা-বাগানসমূহে সময়মতো চায়ের কুঁড়ি গজায় না। খরয় বয়স্ক গাছসহ চায়ের চারা গাছও শুকিয়ে মারা যায়।

এতে যেমন চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হয় তেমনি গুণগতমানও ব্যাহত হয়। চাবাগান মালিকরা জানান, বর্তমান খরাকালীন সময়ে যেসব বাগানে স্প্রিংকলার ইরিগেশনের ব্যবস্থা আছে সেইসব বাগানে এর মাধ্যমে পানির সেচ দিয়ে চাগাছকে বাচিয়ে রাখার প্রানান্তকর চেষ্টা  করা হচ্ছে।

এছাড়া যেসব বাগানে জলাধার বা লেক অথবা পানির উৎস রয়েছে সেসব বাগানে পাম্প বা হোস পাইপ ব্যবহার করে সেচের ব্যবস্থা করে গাছ বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট খরা এবং অত্যধিক তাপমাত্রা থেকে রক্ষা পেতে ও রেড স্পাইডার থেকে চা গাছগুলোকে বাঁচাত বাগানগুলোকে আরো প্রচুর পরিমানে সেড ট্রি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

এসএ/সিলেট