রিকাবিবাজারে পুলিশের অভিযানে আটক...
সিলেট নগরীর রিকাবিবাজারে অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে লামাবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. আলী খানের নেতৃত্বে রিকাবিবাজারস্থ নূরী...
স্মৃতি বিজড়িত ওসমানী জাদুঘর
ছবি সংগৃহিত
সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র নাইওরপুল এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ওসমানী জাদুঘর হলেও অনেকেই এই জাদুঘরটির খোঁজ জানেন না। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জেনারেল ওসমানীর মহান অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও নেই তেমন প্রচার-প্রচারণা। যার কারণে দর্শনার্থীর উপস্থিতি এখানে খুবই সীমিত। এমনটা জানালেন ওসমানী জাদুঘরের সহকারী কীপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানীর পৈত্রিক বাড়িতে এ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এটির রক্ষনাবেক্ষন করছে। বাগান বেষ্টিত বাংলো ধাচের টিনশেডের বাড়িটি দূর থেকে যে কাউকে আকর্ষণ করবে। প্রাচীন আদলের এই বাড়িটি ১৯৩০ সালে নির্মিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাদুঘরে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
ওসমানী জাদুঘরের সামনে স্থাপিত ফলক থেকে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারী সে সময়ের রাষ্ট্রপতি লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। এরপর ১৯৮৭ সালের ৪ঠা মার্চ এই জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয়। এটা শুধু বাড়ি কিংবা জাদুঘর নয়, একটি ঐতিহাসিক স্থান। পুরো দেশের মানুষের হৃদয়ের মানসপটে এই নাইওরপুলস্থ বাড়ির সঙ্গে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে।
জাদুঘর ঘুরে দেখা গেছে, ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনের জিনিসপত্র এবং ওসমানীর ব্যবহৃত পোশাকও জাদুঘরটিতে নিদর্শন হিসেবে স্থান পেয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে টানানো আছে বাবারকুলে ওসমানীসহ মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ অনেক ছবি। এছাড়া বিভিন্ন সময় প্রাপ্ত পদক সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। যাদুঘরের সংরক্ষিত জিনিসগুলো তিনটি গ্যালারীতে স্থান পেয়েছে। এই তিন গ্যালারীজুড়ে ৪শ’ ৭৩টি নিদর্শন রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
প্রথম গ্যালারীতে জেনারেল ওসমানীর ব্যবহারের খাট, চেয়ার, টেবিল, বই, বুক সেলফ, কাপড় ও আলনা, বিভিন্ন সময়কার স্মৃতি বিজড়িত ছবি দেয়ালে টানানো রয়েছে। দ্বিতীয় গ্যালারীতে ওসমানীর কর্মজীবনে অর্জিত বিভিন্ন পদক, র্যাংক, উপহার সামগ্রী, মুক্তিযুদ্ধ সময়কার বিভিন্ন চিত্রশিল্পীদের আর্ট করা ছবি, রণাঙ্গনে যুদ্ধের পরিকল্পনা ও নির্দেশনার ছবি, বসার ঘরের বেতের সোফা। তৃতীয় গ্যালারীতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে পরিকল্পনা করার জন্য বাংলাদেশের ম্যাপ, পড়ার জন্য জার্নাল, টেবিল-চেয়ার, খাট, খাবারের টেবিল, নামাজের চৌকি, টুপি, রেফ্রিজারেটর।
জাদুঘরের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা জানান, এখানে অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি লোকবল সংকট রয়েছে। সরকার অনুমোদিত ৯টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৫ জন। এই ৫ জনের মধ্যে স্থায়ী পদ হলো মাত্র দু’টি-সহকারী কীপার ও পরিচ্ছন্ন কর্মী। একজন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে কাজ করছেন। বাকি দু’পদ আউট সোর্সিং ও দৈনিক ভিত্তিক। এছাড়া আরও ৪টি পদ এখনও শুন্য রয়েছে। তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা আরো জানান, প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ জন দর্শক জাদুঘরটি দেখতে আসেন। ছুটির দিন হিসেবে শুক্রবার দর্শনার্থী বেড়ে ৫০ থেক ৬০ জন আসেন। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসে র্দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ দর্শনার্থী প্রতিদিন গ্যালারী ঘুরে দেখেন। এখানে টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হয়। তবে তিন বছরের নিচের শিশুদের বিনা টিকেটে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। তিন থেকে বারো বছরের শিশু ১০ টাকা, প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা , বিদেশেীদের জন্য টিকেটের আলাদা মূল্য রয়েছে। সার্কভুক্ত দেশের জন্য ৩০০ টাকা, এছাড়া অন্যান্য বিদেশীদের জন্য ৫০০ টাকা টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে জাদুঘরের পক্ষ থেকে জেনারেল এম এ জি ওসমানীর জন্মদিবস (১লা সেপ্টেম্বর), মৃত্যু দিবস (১৬ই ফেব্রæয়ারি), স্বাধীনতা দিবস (২৬শে মার্চ) এবং বিজয় দিবস (১৬ই ডিসেম্বর) পালন করা হয়ে থাকে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতির বাড়ি হওয়ার কারণে একাত্তর সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গ্রেনেড মেরে ধ্বংস করেছিল বলে জানান সিলেট জেলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুন রশিদ। তিনি বলেন, এই বাড়িতেই জীবনের শেষ সময়টুকু কাটিয়েছেন বাংলার বীরসেনানী মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মাদ আতাউল গনি ওসমানী। ‘নূর মঞ্জিল’ জেনারেল ওসমানীর পৈতৃক বাড়িটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘ওসমানী যাদুঘর’। এটিকে আরও প্রচারের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত করতে হবে।
ওসমানী জাদুঘরের সহকারী কীপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ জাদুঘরটি আরও পরিচিত ও সমাদৃত করতে সরকারের পাশাপাশি সিলেটের স্থানীয় কবি, ছড়াকার, সাহিত্যিক ও দেশপ্রেমিক সচেতন মহলের এগিয়ে আসা দরকার।
এসএ/সিলেট