বর্ষায় পেট খারাপের ঝুঁকি...
বর্ষাকাল গরমের তীব্রতা থেকে মুক্তি দেয়, নিয়ে আসে স্বস্তি। এ সময় বাঙালির মন উড়ু উড়ু করে। বৃষ্টি পড়লেই ভাজাপোড়া খেতে ইচ্ছা করে। মুখরোচক সব খাবার যেন বৃষ্টি...
ছবি সংগৃহীত
চলছে মধুমাস। আম, কাঁঠাল, লিচুর মতো এখন বাজারে মিলছে জামের মতো রসালো স্বাদের ফল। এ ফল শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, এর রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতাও।
এ ছাড়া জামের বীজ, পাতা এবং ছাল- সবই ব্যবহার করা হয় বেশ কিছু আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, জিংক, কপার, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও স্যালিসাইলেট। এ ফল খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়-
মানসিকভাবে সতেজ রাখে
জামে থাকা গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ শরীরে কাজ করার শক্তি জোগায়। ক্লান্তির পর জামের শরবত শরীরকে চাঙ্গা করে। জাম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিরাময়ে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম ভীষণ উপকারী একটি ফল। চীনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জাম খাওয়ার ফলে ৬.৫ শতাংশ মানুষের ডায়াবেটিক কমে গেছে। এটি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জাম ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে শরীর সুস্থ রাখে। এক চা চামচ জামের বীচির গুঁড়া খালি পেটে প্রতিদিন সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
হজমে সহায়ক
আয়ুর্বেদিক ওষুধে জাম পাতা ব্যবহার করা হয় ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময়ে। এছাড়াও মুখের স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যার ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার হয় জামপাতা। জাম খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, দাঁত ও মাড়ি শক্ত ও মজবুত করে এবং দাঁতের মাড়ির ক্ষয় রোধে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি
জামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। এজন্য জাম শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি পূরণ করে এবং একই সঙ্গে ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগগুলি প্রতিরোধ করে থাকে। এ ছাড়া মুখের দুর্গন্ধ রোধ, দাঁত মজবুত, মাঢ়ি শক্ত এবং মাঢ়ির ক্ষয়রোধেও জামের জুড়ি নেই।
রক্তশূন্যতা দূর করে
জামে প্রচুর পরিমাণে থাকে আয়রন। এটি শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করে।
হার্ট ভালো রাখে
জাম রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদপিণ্ড ভালো রাখে। এছাড়া শরীরের দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দেহের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
জামে ক্যালোরি থাকে কম, যা ক্ষতিকর তো নয়ই বরং স্বাস্থ্যসম্মত। তাই যারা ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তাদের খাদ্য তালিকায় থাকতে পারে জাম।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়
পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকরা তাজা ফল এবং সবজি খাওয়ার সুপারিশ করে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, জামে সেই সব উপাদান আছে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
জাম খাবার সময় মুখের লালার মধ্যে যে রঞ্জক পদার্থ উৎপাদিত হয়, যা হতে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নেয়। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া হতে মুখে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর জাম মুখের ভেতর উৎপাদিত ক্যান্সারের সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রঙিন ফলের ভেতর যে পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে, এর মধ্যে জামে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
জামে ফাইটো কেমিক্যালস আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সঙ্গে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিরোধ করে ইনফেকশনের মতো সমস্যারও। জামে পাওয়া গেছে অ্যালার্জিক নামে এক ধরনের এসিডের উপস্থিতি, যা ত্বককে করে শক্তিশালী।
ত্বকের জন্য উপকারী
জাম ক্ষতিকর আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করে। এটি অ্যালার্জিক এসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
চোখ ভালো রাখে
বৃদ্ধ বয়সে চোখের অঙ্গ ও স্নায়ুগুলোকে কর্মময় করতে সাহায্য করে জাম। এটি চোখের ইনফেকশনজনিত সমস্যা ও সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রাতকানা রোগ এবং যাদের চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে তাদের জন্য জাম ভীষণ উপকারী। আমাদের নাক, কান, মুখের ছিদ্র, চোখের কোনা দিয়ে বাতাসে ভাসমান রোগজীবাণু দেহের ভেতর প্রবেশ করে। জামের রস এ জীবাণুকে মেরে ফেলতে পারে। সূত্র: বোল্ড স্কাই
এসএ/সিলেট