শাবির নির্মাণ কাজের মান ঠিক...
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) চলমান 'অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৭টি ভবন নির্মাণ কাজের গুণগতমান ঠিক রাখতে এবং সঠিক...
ছবি সংগৃহীত
নিয়মবহির্ভূতভাবে এমফিল ডিগ্রি অনুমোদনের অভিযোগ উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায়ের বিরুদ্ধে।
নিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাশেদ মাহমুদকে বিধিবহির্ভূত একাধিক নিয়ম ভঙ্গ করে এমফিল ডিগ্রি অনুমোদন দেন তিনি।
নিয়মের বাইরে গিয়ে একক স্বাক্ষরে তিনি এমফিল ডিগ্রির অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এমন অনিয়মের বিষয়ে গত বছরের শেষের দিকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্টসহ একাধিক তথ্য প্রমাণ হাতে এসেছে এ প্রতিবেদকের কাছে।
জানা যায়, তৎকালীন ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায় বিধিবহির্ভূত পন্থায় তার তত্ত্বাবধানে থাকা রাশেদ মাহমুদকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করেন। অভিযোগগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত তথ্যমতে এমফিল ডিগ্রির অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়ে বড় ধরনের অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা গেছে।
সেখানে দেখা যায়, ডিগ্রি প্রদানের জন্য নিয়মানুযায়ী গঠিত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক হিমাদ্রী শেখর রায় প্রশাসনের অনুমোদন না নিয়ে অনলাইনে মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছেন রাশেদ মাহমুদের। তবে এসব ডকুমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিয়েছেন বললেও এ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রমাণ বা ডকুমেন্টস পরীক্ষা দপ্তরে নেই বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আদৌ মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন কিনা।
গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বিশ্লেষণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ইংরেজি বিভাগের এমফিল গবেষক রাশেদ মাহমুদ এর মৌখিক পরীক্ষা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অর্ডিন্যান্সে উল্লিখিত আইন অনুযায়ী দুইজন পরীক্ষক নিয়োগ করার কথা। সেক্ষেত্রে একজন পরীক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অধ্যাপক হতে হবে। অপরজন থিসিস পরীক্ষক থেকে নিতে হবে। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মৌখিক পরীক্ষা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দুইজন পরীক্ষকই থিসিস পরীক্ষক ছিলেন বলে জানা গেছে।
এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমোদন না নিয়ে অধ্যাপক হিমাদ্রী শেখর রায় অনলাইনে মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছেন। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনিক অনুমোদন নিয়েছেন বলে হিমাদ্রী শেখর রায় তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু পরীক্ষা দপ্তরে এই ধরনের কোনো ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি। এমনকি উক্ত প্রশাসনিক অনুমোদনের কপি অধ্যাপক হিমাদ্রী শেখর রায় প্রদান করতে পারেননি।
এছাড়াও, মৌখিক পরীক্ষা রিপোর্ট শুধুমাত্র কমিটির আহ্বায়কের একক স্বাক্ষরে পরীক্ষা দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুনকে সভাপতি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্রধান মো. মাহবুব হোসেনকে সদস্য সচিব করে ৩ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্য হলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেন, ‘একাধিক নিয়মভঙ্গ করে এমফিল ডিগ্রি অনুমোদন শুধু আইনগত অপরাধ না বরং শিক্ষকতার নৈতিক বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ। এসবের সুষ্ঠু বিচার না হলে ভবিষ্যতে আরও ঘটতে পারে।’
এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন বলেন, ‘আমরা তদন্তের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। বাকিটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে শাবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও পাবিপ্রবির শিক্ষক রাশেদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি শুধু একজন প্রার্থী, সে হিসেবে ঐ বিভাগ (শাবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগ) ভালো জানবে।’
মুঠোফোনে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায় বলেন, ‘মোবাইলে আসলে কে না কে ফোন দেয় তা বুঝা যায় না।’ পরে ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, ‘নিয়মবহির্ভূত এমফিল ডিগ্রি অনুমোদনের তদন্ত রিপোর্ট জমা আমরা পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে সিন্ডিকেট সভায় সেটি উপস্থাপন হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এসএ/সিলেট