নোমান হত্যার দায় স্বীকার শ্যালক...
আদালতের নির্দেশে ৪ দিনের পুলিশের রিমান্ড শেষ জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী নোমান উদ্দিন হত্যার দায় স্বীকার করলেন শ্যালক সুমন। রবিবার চার দিনের...
সিলেট-৫
‘বিএনপির দুর্গ হলো সংসদীয় আসন সিলেট-৫(জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট)। এখানে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি খুবই শক্তিশালী ও জনপ্রিয়। অথচ নির্বাচনী জোট হলেই এ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় শরীকদেরকে। এতে তৃণমূলের কর্মীরা বার বার হতাশ হয়েছেন। তবে এবার নির্বাচনী জোট হলেও শরীক নয়, দলীয় প্রার্থী চাই।’-এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন সেলিম।
ঠিক একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হাজী শরীফুল হক ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খসরুজ্জামান পারভেজ। তারা বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ বিএনপিকে ‘বগুড়ার’ মতো ভালোবাসে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এলাকার মতো মানুষ জিয়া পরিবারকে অন্তর থেকে ভালোবাসে। জিয়া প্রেমিক মানুষ ধানের শীষে ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে সে সুযোগ পাচ্ছেনা। এখানে বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে দলীয় প্রার্থীর বিকল্প নেই।’
বিএনপির সূত্র জানায়, এ আসনে সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে বিএনপি প্রার্থী পেয়েছিল, এরপর আর ভাগ্যে জোটেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম সহ সভাপতি মামুনুর রশীদকে (চাকসু মামুন) দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া হলেও জোটের সঙ্গে আসন ভাগ-বাটোয়ারায় তার কপাল পুড়েছিল। দলের সিদ্ধান্তে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তখন হতাশ হয় তৃণমূলের কর্মীরা। কিন্তু এবার তারা কোনো ভাবেই ছাড় দিতে চাননা।
সূত্র আরও জানায়, এ আসন থেকে ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবুলহারিছ চৌধুরী। এরপর আসনটিতে বিএনপির জনপ্রিয় কোন নেতা প্রার্থী হওয়ার সুযোগই পাননি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রয়ারীর নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন আব্দুল কাহির চৌধুরী। একই বছর ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়পার্টি থেকে পদত্যাগ করে বিএনপি থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন এম এ মতিন চৌধুরী। তবে তিনি ভোটের মাঠে ছিলেন নিষ্ক্রিয়। এরপর ৮ম ও ৯ম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে আসনটি বাগিয়ে নেয় জোটসঙ্গী জামায়াত। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি জোটের ভোটে বিজয়ী হয়ে সংসদে যান। ২০০৮ সালে আবারও জোটের প্রার্থী হলেও বিজয় ধরে রাখতে পারেননি তিনি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমেদ মজুমদার ১,০৯,৬৯০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তখন তার নিকতম প্রতিদ্ব›িদ্ব বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী জামায়াত নেতা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ৭৮,০৬১ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ৮,৯৪৬ ভোট পেয়েছিলেন।
এরপর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফের আসনটি জোটসঙ্গী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে বিএনপি জোটের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে মোট ভোট পেয়েছিলেন ৮৬ হাজার ১৫১ ভোট। আর নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩৫ ভোট পেয়ে জয়ী হন। এটি ছিল ১৫৮টি কেন্দ্রের ফলাফল। শত প্রতিকূলতা ও রক্তপাতের মধ্যে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এ ভোট পেয়েছিলেন।
কিন্তু এর আগে ২০০৮ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের দলীয় প্রতীক নিয়ে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক পেয়েছিলেন ৮,৯৪৬ ভোট। এই দুই নির্বাচনের ভোটের হিসাব তুলনা করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এখানে বিএনপির অবস্থান খুবই শক্তিশালী রয়েছে।
এদিকে, বারবার জোটের শরীকদের আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ রয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। যার কারণে এবার নির্বাচনী জোটহলেও এ আসনটি ছাড়তে রাজি নন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি হলো বার বার জোটের জন্য ছাড় দেওয়ায় দল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এদিকে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই বিএনপি হাইকমান্ড সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বলে একাধিক সূত্র জানায়। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপি নেতারা জোরালো প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা একই সাথে কেন্দ্রেও নানাভাবে যোগাযোগ রাখছেন। সবকিছু মিলিয়ে প্রচারণায় বিএনপি প্রতিদ্ব›িদ্ব অন্যান্য দলের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বিএনপির একাধিক নেতা প্রচারণায় রয়েছেন। এদের মধ্যে দলের হাইকমান্ডকে জানান দিতে কোমরবেঁেধ মাঠে নেমেছেন সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম সহ সভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন) । তিনি দলের ৩১ দফা কর্মসূচিসহ স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ভোটারের কাছে ছুটছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নদী ভাঙ্গন সহ এলাকার বিভিন্ন সমস্যার নিরসনের দাবিতে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। এছাড়া প্রতিদিন রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান উপেক্ষা করে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও কর্মীসভা,উঠান বৈঠক,জনসভা ও বিভিন্ন পেশাজীবিদের সাথে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। চাকসু মামুনের সাথে পাল্লা দিয়ে মাঠে রয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আশিক উদ্দিন চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকীর রহমান পাপলু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরী।
থেমে নেই অন্যান্য দলের সম্ভ্যাব্য প্রার্থীরাও। সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে কাছে টানার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। জামায়াতে ইসলাম সিলেট জেলার নায়েবে আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসেন খানকে দলীয় প্রার্থী ঘোষনা করেছে। তিনি দল গোছানোর পাশাপাশি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, খেলাফত মজলিস সিলেট জেলা শাখার উপদেষ্টা মুফতি আবুল হাসান, ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় সিনিয়র ভাইস চেয়ার ম্যান মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী সহ অনেকেই প্রচারণায় রয়েছেন।
জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমদ ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ আবুল বাশার বলেন,আওয়ামী সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঝুঁকি নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন চাকসু মামুন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছিল। এসব মামলা ও শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতনে কর্মীরা যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন চাকসু মামুন। দলের এমন পরীক্ষিত নেতাকে দল অবশ্যই মূল্যায়ন করবে।
সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক এম. শোয়েব আহমদ বলেন, এ অঞ্চলের কর্মীদের বুকফাটা আর্তনাদ ও সাধারণ মানুষের মনের ভাষা বুঝার জন্য দলের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সিলেট-৫ আসন সফর করে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য হাইকমান্ডকে অনুরোধ করবো ।
কাওছার আহমদ