গোয়াইনঘাটে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন আনফরের ভাঙ্গা সেতুর কাজ দৃশ্যমান

post-title

ছবি সংগৃহীত

সিলেটস্থ গোয়াইনঘাটের আনফরের ভাঙা মূলত বিছনাকান্দি ইউনিয়নের একটি পযটন স্থান। যা উপজেলার হাদারপার বাজার ও কুপার বাজারের মাঝে অবস্থিত। এটি লুনি নদীর উপর একটি বিশাল ভাঙন।

স্থানীয়ভাবে "আনফরের ভাঙা" নামে পরিচিত। (১৩ নভেম্বর-২৩) এখানে একটি সেতুর ভিত্তি প্রস্থও স্থাপন করা হয়েছে। যা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য কৃষি, কর্মসংস্থান এবং পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এটি গোয়াইনঘাটের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান এবং দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। স্থানীয়দের আশা ছিলো এখানে একটি সেতু নির্মিত হলে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পর্যটন শিল্প আরও উন্নত হবে। এই স্থানটি গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি গুরুত্বর্পূণ অংশ এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে অবদান রাখে।

গোয়াইনঘাট উপজেলায় আনফরের ভাঙ্গাটি এ অঞ্চলের মানুষের ইতিহাস ঐতিহ্যের এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মানুষের আবেগ, অনুভূতি ও কল্পনা এসে ভর করে। ব্রীজের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক এ এলাকার মানুষের জীবনের নবযাত্রা শুরু হয়েছে।

স্বপ্নের ডানা মেলেছে দীর্ঘ প্রত্যাশার কাঙ্খিত ব্রীজ নির্মাণে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনে। খুবই জনগুরুত্বপুর্ন এ ব্রীজটি যে শুধু গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্থমপুর এলাকাবাসীর জন্য প্রয়োজন তা নয়! এটি বিছনাকান্দি ইউনিয়নের কৃষিতে,পর্যটনে,পাথর কোয়ারিসহ ভারত-বাংলাদেশ স্থল পথে যোগাযোগের অন্যতম একটা মাধ্যম হতে পারে। পর্যটনখ্যাত বিছনাকান্দীতে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম আনফরের  সেতু দিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটকরা বিছানাকান্দীকে অবলোকন করতে আসলে ও আনফরের ভাঙ্গায় কোন সেতু না থাকায় পর্যটকদের পড়তে হত নানা প্রতিবন্ধকতায়। পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি।

কেউ স্বস্থিতে ঘুরে যেতে পারেন না এ পর্যটন স্পটের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত স্থানীয় এলাকাবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবিতে আনফরের ভাঙায় সেতু নির্মাণ কাজের দৃশ্যমান হওয়ায় ঐ এলাকায় পর্যটক সমাগম কয়েকগুণ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি ছাড়াও বেকারত্ব দূরীকরণে আনফরের ভাঙায় নির্মিত সেতুটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। সেতুটি নির্মাণ হলে উত্তর সিলেটের গুরুত্বর্পূণ পর্যটন স্পট বিছনাকান্দিতে ঘুরতে আসা সকল পর্যটকরা এই সেতু ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারবে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বিছানাকান্দী পাথর কোয়ারী। বর্তমানে সেতু না থাকায় স্থানীয় এবং দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকরা নৌকাযোগে বিছনাকান্দিতে যাতায়াত করতে হয়। সেতু নির্মাণের ফলে একদিকে যানবাহন ব্যবস্থা তরান্বিত হবে। অন্য দিকে অল্প সময়ে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বিছানাকান্দী পাথর কোয়ারী ঘুরে দেখা সম্ভব হবে। সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে যোগাযোগের দ্বার গোটা দেশের সাংস্কৃতিক দিগন্তকে প্রভাবিত করবে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ১নং রুস্থমপুর ইউনিয়নের বিছনাকান্দি লুনি নদী (আনফরের ভাঙ্গায়) সেতু নির্মাণ কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।  সেতুটি নির্মাণে শুধু বিছনাকান্দি ইউনিয়নবাসী নয় বরং এর উপকার পাবে পুরো দেশবাসী। এ সেতুটি নির্মাণে সিলেটের পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি দেশ-বিদেশ থেকে সিলেটে ঘুরতে আসা ভ্রমণপিপাসুরা যাতে অল্প সময়ে বিছানাকান্দি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পারেন সেইলক্ষেই সরকার কাজ করছে। আনফরের ভাঙ্গায় সেতু নির্মাণের পাশাপাশি গোয়াইনঘাটের জাফলং থেকে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে ৩০ কিলোমিটার রাস্থা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে সীমান্ত এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান ও পর্যটনশিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়টি মাথায় রেখে দ্রæত গতিতে কাজ সম্পাদন করতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৩০ কিলোমিটার রাস্থা ও সেতু নির্মাণের জন্য ইতোপূর্বে সকল জরিপ সম্পন্ন শেষে আনফরের ভাঙায় সেতুর কাজ চলমান রয়েছে। সীমান্তঘেঁষা ৩০ কিলোমিটার পথে ভ্রমন পিয়াসুরা ভারত সীমান্তঘেঁষা অধিকাংশ স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পরবেন। সরকারের উন্নয়ন পরিক্রমায় সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করার লক্ষে পর্যটনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ উদ্দোগ সরকার হাতে নিয়েছে।

মাত্র ৩০ কিলোমিটারের রাস্থা এ অঞ্চলের পর্যটনশিল্পকে আমূল বদলে দেবে। এই সড়ক ঘিরে সবুজ পাহাড়ের নিচে গড়ে উঠবে হোটেল, মোটেলসহ একাধিক রিসোর্ট পাশাপাশি ব্যবসায়ীক দোকানপাট তো থাকবেই। সেই সঙ্গে সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলো ইকো ট্যুরিজমের আওতায় চলে আসবে। দৃষ্টিনন্দন সবুজ ছায়ায় আচ্ছাদিত বিছানাকান্দি পর্যটন এলাকাটি দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠবে। সরকারের ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন লুনি নদীর উপর (আনফরের ভাঙ্গায়) ভিত্তি প্রস্থরের কয়েক মাসের মধ্যে সেতুর কাজ দৃশ্যমান হওয়ায় এখানকার সচেতন মহল এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে উৎফুল্লতা বিরাজ করছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লি: এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর খুরশেদ আলম বলেন, ২৮৮.৩ মিটার লম্বা আনফরের ভাঙ্গা সেতুটি আর্ন্তজাতিক প্রযুক্তিতে সর্বোত্তম গুণগত মান বজায় রেখে লুনি নদীর উপর ৩৯কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন রয়েছে। দূরদর্শী চিন্তা মাথায় রেখে সরকার উন্নয়ন পরিক্রমার এ মেগা প্রকল্পটি বাস্থবায়নের জন্য সকল প্রকার উদ্যোগ নিয়েছে। সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষ নানামুখী কর্মসংস্থানে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে। প্রজেক্ট ম্যানেজার মো: ফারুক হোসেন জানান, নানা প্রতিবন্ধকতা উৎরাই পেরিয়ে বহুল কাঙ্খিত আনফরের ভাঙ্গা সেতুর কাজ এ পর্যন্ত ৬০% সমাপ্ত করতে পেরেছি। টেন্ডারের নির্ধারিত সময়ের পূর্বে অবশিষ্ট কাজ সম্পাদন করা হবে পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে পারবো।


এসএ/সিলেট