২৪ এর রঙে গ্রাফিতি বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণীতে বিভাগীয় কমিশনার

জুলাই যোদ্ধাদের ত্যাগের স্বাক্ষর গ্রাফিতিতে ফুটে উঠেছে

post-title

ছবি সংগৃহিত

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খান মো রেজা উন নবী বলেছেন, ফ্যাসিবাদের রক্তহিম করা নিপীড়ন আর দুঃশাসনে আমাদের মাতৃভূমি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। সারা দেশ একটা কারাগারে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারতো না। কথা বললেই হত্যা ও গুমের শিকার হতে হতো।

একটা পরিবারের লোকজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো, তাদেরকে আর খোঁজে পাওয়া যেতো না। মানুষ ভেবে নিয়েছিল এই ফ্যাসিবাদ আর কোনোদিন সরবে না। এমন এক ভয়ংকর ধ্বংসস্তুপ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে রাস্তায় নেমেছিল আমাদের স্কুল কলেজের কিশোর তরুণরা। আবু সাঈদ, মুগ্ধ এটিএম তুরাবরা বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে এই অবরুদ্ধ জাতিকে মুক্ত করে দিয়েছে। রক্তের আঁখরে লেখা সেই ইতিহাস, রক্তস্নাত সেই স্বাক্ষর আমাদের শিশু কিশোরদের গ্রাফিতিতে ফুটে উঠেছে। এই গ্রাফিতি জুলাইয়ের অমর চেতনাকে ধারণ করে। আগামীর বাংলাদেশ জুলাইয়ের রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় গড়ে উঠবে।

তিনি বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টায় বিভাগীয় কমিশনার অফিসের হল রুমে ‘২৪ এর রঙে গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের ৬ টি বিজয়ী প্রতিষ্ঠানের হাতে প্রায় পনের লক্ষ টাকার চেক বিতরণ করা হয়।

এই প্রতিযোগিতায় জাতীয়ভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেছে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা সরকারি ডিগ্রি কলেজ। এই কলেজের শিক্ষার্থী তাহিয়া বিন হামিদ ও তার গ্রæপ প্রথম হয়েছে। বিজয়ী বড়লেখা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষার্থীদের হাতে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেয়া হয়। সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান বিজয়ী প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান বিজয়ীকে ২ লাখ টাকা ও তৃতীয় স্থান বিজয়ীকে ১ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া জেলা পর্যায়ে বিজয়ীদের হাতে চেক তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ বিজয়ীদের হাতে চেক তুলে দেন।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমরা কোনো ক্ষমতার মালিক নই। আসল ক্ষমতার মালিক আকাশের মালিক। আমরা ক্ষমতা পেয়ে তা ভুলে যাই। অতীতের ফ্যাসিবাদি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা পেয়ে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালিয়েছে, গণহত্যা চালিয়েছে। তারা সকল সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসকগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের কিছু সময় দেন। এক সময় পাকড়াও করেন। তিনি বলেন, বিচার শুরু হয়েছে। এদেশে সকল হত্যা গুমের বিচার হবেই। সকল গুলি, বুলেট, বন্দুকের নলের হিসাব দিতে হবে। শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। জুলাই আন্দোলনে সিলেটের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সাংবাদিক এটিএম তুরাবকে টার্গেট করে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। তার গায়ে প্রেস লিখা জ্যাকেট থাকা সত্তে¡ও পুলিশ গুলি করে তার বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। এভাবেই ফ্যাসিবাদ সরকারের পেটুয়া বাহিনী পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরেছে। আমরা এই রক্তমাখা দিনগুলো ভুলতে পারবো না।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন নূর জুলাই চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করার আহবান জানিয়ে বলেন, দেয়ালের গ্রাফিতি আর পাথরের চিত্রাঙ্কন চিরকাল থাকে না। কিন্তু হৃদয়ে জুলাই চেতনা ধারণ করতে পারলে আগামীদিনের বাংলাদেশ সেই চেতনায় এগিয়ে যাবে।


এসএ/সিলেট