নিউইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ৫

post-title

ছবি সংগৃহীত

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের পার্ক অ্যাভিনিউতে এক বন্দুকধারীর গুলিতে এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। পরে ওই বন্দুকধারী নিজেই আত্মঘাতী গুলিতে প্রাণ দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত পুলিশ কর্মকর্তার নাম দিদারুল ইসলাম। তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে ছিল।

সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় পার্ক অ্যাভিনিউয়ে একটি ভবনে ঢুকে হামলা চালান ২৭ বছর বয়সী শেন ডেভন তামুরা। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, তামুরা ছিলেন লাস ভেগাসের বাসিন্দা।

সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে ভবনের লবিতে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে লিপ্ত হন ওই বন্দুকধারী। এরপর তিনি ভবনের ৩৩ তলায় উঠে যান। পরে ভবনের সিঁড়িতে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর হাতে একটি রাইফেল ছিল এবং প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

নিউইয়র্ক পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ জানান, ‘হামলাকারী একা ছিলেন, যিনি ইতোমধ্যে নিরস্ত্র হয়েছেন।’ পুলিশ নিশ্চিত করেছে, বন্দুকধারী একাই হামলা চালিয়েছেন এবং তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার কিছু আগে পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাইকে পার্ক অ্যাভিনিউ এবং ইস্ট ৫১তম স্ট্রিট এলাকা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানায়। মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, ‘নিউইয়র্কবাসী, ম্যানহাটনের মিডটাউনে একটি সক্রিয় গুলির ঘটনা চলছে। আশপাশে থাকলে সতর্ক থাকুন এবং পার্ক অ্যাভিনিউয়ের কাছাকাছি থাকলে বাইরে বের হবেন না।’

এফবিআইয়ের নিউইয়র্ক ফিল্ড অফিস জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থলে সহায়তা দিচ্ছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউয়ের ওই ভবনে ন্যাশনাল ফুটবল লিগ (এনএফএল), ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম ব্ল্যাকস্টোন এবং জেপি মরগান চেজের করপোরেট অফিস রয়েছে। এনএফএল কর্মীদের সতর্ক করে জানানো হয়, ‘বহির্গমন করবেন না। অবস্থান সুরক্ষিত রাখুন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপনার তলা ক্লিয়ার না করা পর্যন্ত আড়ালে থাকুন। ফোন সাইলেন্ট করে দিন।’

হামলার সময় ভবন থেকে মানুষদের হাত তুলে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও জরুরি বাহিনী মোতায়েন ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জানান, সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক একটি কমান্ড পোস্ট স্থাপন করেছে এবং এফবিআই ঘটনাস্থলে রয়েছে।

নওয়াইপিডির ইন্সপেক্টর খন্দকার আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, দিদারুল ইসলাম প্রায় চার বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছিলেন। তাঁর পরিবারে মা–বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান আছেন। তাঁর স্ত্রী এখন সন্তানসম্ভবা। ব্রংস বরোর পার্চেস্টার এলাকায় তিনি বসবাস করতেন। আর তাঁর কর্মস্থল ছিল ব্রংসের ৪৭ প্রিসেন্ট। সোমবার মধ্যরাতে তাঁরা মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার তাঁর জানাজা হতে পারে।

দিদারুলের বাড়ি বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বলে জানান তিনি।

খন্দকার আবদুল্লাহ আরও বলেন, হামলায় দিদারুল ইসলামের নিহত হওয়ার খবর শুনে তাঁর বাবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

হাউস মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফরিজ হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এনওয়াইপিডির জন্য প্রার্থনা করছি। এই কঠিন সময়ে ঈশ্বর যেন আমাদের শহরের উপর দৃষ্টি রাখেন।’

বন্দুক সহিংসতা পর্যবেক্ষণকারী অলাভজনক সংস্থা ‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ’-এর তথ্য অনুযায়ী, এটি ছিল চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫৪তম গণগুলির ঘটনা। সংস্থাটি জানায়, যেখানে বন্দুক হামলায় অন্তত চারজন (হামলাকারী ব্যতীত) নিহত বা আহত হন, সেটিকে গণগুলি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


এসএ/সিলেট