Search all
  • Search all
  • Articles
  • Authors
  • Tags
Search all
  • Search all
  • Articles
  • Authors
  • Tags

কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে হাজারো মানুষ ভিটামাটি হারিয়ে দিশাহারা

post-title

ছবি সংগৃহীত

সিলেটের জকিগঞ্জে রাক্ষুসে কুশিয়ারা নদী একে একে গিলে খাচ্ছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণের মানচিত্র। আর এতে পাল্টে যাচ্ছে জকিগঞ্জের মানচিত্র। ছোট হচ্ছে দেশের ভূখণ্ড আর বড় হচ্ছে ভারতের ভূখণ্ড। কেননা বাংলাদেশ-ভারত পৃথক দু’টি রাষ্ট্রের জকিগঞ্জ সীমান্ত টানা হয়েছে কুশিয়ারা নদী দিয়েই।

সে কারণে কুশিয়ারা নদীর এপার ভাঙ্গলে ছোট হচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্র আর ভরাট হচ্ছে ওপার ভারতের মানচিত্র।

জানা যায়, সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলাবাসীর প্রধান সমস্যাই নদী ভাঙ্গন। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ ভিটামাটি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। তাই নদী পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে এক আতঙ্কের নাম কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গন।

প্রতিবছরই জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়। এতে বসতভিটা ও জায়গা-জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শতশত পরিবার। একে একে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও গোরস্থানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর এমন রাক্ষুসে অবস্থানের ফলে শুধুমাত্র নদী পাড়ের মানুষের স্বপ্ন নয় বরং ধীরে ধীরে বাংলাদেশের মানচিত্র গিলে খেতে শুরু করেছে।

কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জকিগঞ্জ পৌর এলাকার কেছরী, ছয়লেন, মাইজকান্দি, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছবড়িয়া, শরিষা, মানিকপুর, বাখরশাল, লালোগ্রাম সেনাপতিরচক, রারাই, বিরশ্রী ইউপির বড়চালিয়া, পিয়াইপুর, বারজনী, উজিরপুর, খলাছড়া ইউপির লোহারমহল, সুনাপুর, পশ্চিম ও পূর্ব সুপ্রাকান্দি, বেউর, সুলতানপুর ইউপির, অজরগ্রাম, গঙ্গাজল, সহিদাবাদ, বক্তিপুর, পিল্লাকান্দি, ইছাপুর, খাদিমান গ্রাম কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে।

অতিসম্প্রতি জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মানিকপুর, ছবরিয়া গ্রামে কুশিয়ারা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত এক বছরে কুশিয়ারার ভাঙ্গনে নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি বসতঘর কুশিয়ার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। একইভাবে স্কুল, মাদ্রাসা, গোরস্থান, মসজিদ ও বাজার-হাট চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। নদী পারেন শতাধিক বাড়ি ঘর এখনো রয়েছে ভয়ংকর ঝুঁকিতে।

কুশিয়ারা নদীর এমন ভয়ংকর তান্ডবে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন নদী পাড়ের অসংখ্য মানুষ।

ভুক্তভোগীরা বলেন, প্রতি বছর কুশিয়ারা নদী আমাদের জমি একটু একটু করে ভেঙ্গে নিয়ে যায়। এ থেকে উত্তরণে আমরা স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপির পেছনে পেছনে ঘুরে শুধু ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে বছরের পর বছর যাচ্ছে। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গন নিরসনে এলাকাবাসী দাবী করে আসলেও বছরের পর বছর চলে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়না। ব্লক ব্লক বসিয়ে টেকসই কোন কাজ হচ্ছে না।

স্থানীয় ছবরিয়া গ্রামের মৃত ইসহাক আলীর পরিবারের লোকজন জানান, এখন নদীটি যেখানে ভাঙ্গছে, সেখানে আমাদের বসতঘর ছিল। তাই ঘরটি এখন সরিয়ে নিয়েছি। এরপর আর জায়গা নেই। আর নদী ভাঙ্গলে কি করবো জানিনা।

স্থানীয় রারাই গ্রামের মাওলানা আলাউদ্দীন তাপাদার বলেন, এবার আমাদের গ্রামের পাঁশেই মানিকপুর অংশে প্রায় দুইশত মিটার জায়গা ভেঙ্গে কুশিয়ারা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিএসএফ বাঁধা দিচ্ছে বলে এখানকার বাঁধটি এতদিন দেয়া হয়নি। বর্তমানে বর্ষা চলে এসেছে, তাই তড়িগড়ি করে একটি বাঁধ দেয়া হচ্ছে। এই বাঁধ দিয়ে বর্ষায় পানির স্রোত আটকানো সম্ভবনা। তাই বাংলাদেশের মানচিত্র রক্ষার স্বার্থে কুশিয়ারা নদীর ডাইকে ব্লক ফেলে টেকসই কাজ করা দরকার।

জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালিক তাপাদার বলেন, ভয়াবহ ভাঙ্গন প্রতিরোধে যেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তা খুবই নিম্নমানের কাজ। ভাঙ্গন এলাকায় পুরাতন ডাইকের সমান বাঁধ দেয়া হচ্ছে। অথচ উচিত ছিল নতুন মাটি পূরাতন বেড়িবাঁধ থেকে উচু করে দেয়া। কেননা নতুন মাটি পরবর্তী অনেক নীচু হবে। কিন্তু নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণে এসবের তোয়াক্কা করছেনা কেউ।

স্থানীয় একাধিক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জানান, কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনের বিষয় নিয়ে বিগত দিনে যারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তাদের বারবার বলেছি। আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোন কাজ হয়নি। দেশের অভ্যন্তরীণ নদী ভাঙ্গন রোধে দেশের কোটি কোটি টাকা ব্যায় করা হলেও সীমান্ত নদী কুশিয়ার’র ভাঙ্গন রোধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যার ফলে দিন দিন বাংলাদেশের ভূখণ্ড ভেঙ্গে ছোট হচ্ছে আর ভারতের ভূখণ্ড ভরাট হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা ও উপ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মাহফুজুর রহমান ভূইয়া বলেন, কুশিয়ারার ভাঙ্গনকৃত এলাকায় নতুন করে বেড়িবাঁধ দেয়া হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নির্ধারণ করে ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃকপক্ষকে অবগত করেছি।

এসএ/সিলেট