কোম্পানীগঞ্জে উদ্ধার হওয়া বিপুল...
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জব্দ হওয়া বিপুল পরিমাণ মাদক ধ্বংস করা হয়েছে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১০টায় কোম্পানীগঞ্জ থানা...
ছবি সংগৃহিত
নগরীতে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও বিচ্ছিন্নকৃত বিদ্যুৎ লাইন পুনঃসংযোগসহ ১১ দফা দাবিতে সড়ক অবোরধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারি চালিত রিকশা শ্রমিকরা।
অবশেষে দাবি আদায়ে রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ৬ ঘন্টা পর সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন, সিলেট জেলার পক্ষ থেকে প্রথমে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে মিছিল নিয়ে এসে নগরের চৌহাট্টায় সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। সড়ক অবরোধ করে এসময় তারা “রিকশা ফিরিয়ে দাও”, “লাইসেন্স দাও”, “কর্মসংস্থান সৃষ্টি করো” - এসব স্লোগান দিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
পরে আগামী রবিবারের (২ নভেম্বর) মধ্যে দাবি না মানলে পরিবারসহ প্রতিকী অনশনের ঘোষণা দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এই ঘোষণা দিয়ে চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক থেকে সরে যান তারা। অবরোধ তুলে নেওয়ায় ওই সড়ক দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
এদিকে, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ ও অবরোধকে কেন্দ্র করে সতর্কবস্থানে ছিল সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে চৌহাট্টা এলাকায় মোতায়েন করা সেনাবাহিনী ও বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্যদের। তবে কোনো অনাকাঙ্খত ঘটনা ঘটেনি।
বক্তারা জানান, এই বাহন পরিবেশবান্ধব ও নিম্নআয়ের হাজারো মানুষের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। প্রশাসনের এই পদক্ষেপে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক পরিবার অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক মাসরুখ জলিল বলেন, ‘ব্যাটারি চালিত রিকশা শুধু পরিবেশবান্ধবই নয়, এটি আন্দোলনের সময় সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছে। এমনকি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২৪ জন রিকশাচালক জীবন দিয়েছেন।’
শ্রমিকদের দাবি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিম্নআয়ের মানুষের জীবিকার একমাত্র ভরসা। অথচ প্রশাসনের আকস্মিক সিদ্ধান্তে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার আজ অনিশ্চয়তার মুখে। তারা অভিযোগ করেন, কোনো বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে জীবিকার এই পথ বন্ধ করে দেওয়া অমানবিক। আন্দোলনকারীদের মতে, ব্যাটারি চালিত রিকশা শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, এটি নগরবাসীর সাশ্রয়ী যাতায়াতের মাধ্যমও। তাই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, আটক যান ফেরত ও লাইসেন্স ব্যবস্থা চালুর দাবিতে তারা রাস্তায় নেমেছেন।
শ্রমিকদের দাবি
১। ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করে আটককৃত যানবাহন ফিরিয়ে দিতে হবে। যে সকল গ্যারেজের বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে সে সকল সংযোগ পুনরায় দিতে হবে।
২। বিআরটিএ কর্তৃক নীতিমালা প্রণয়ন, যানবাহনের লাইসেন্স ও চালকদের লাইসেন্স প্রদান সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নগরীর গলি ও প্রযোজনীয় সড়কে ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল করতে দিতে হবে।
৩। যৌক্তিক ও সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যাবস্থাপনা প্রণয়ন করতে রিকশা, সিএনজি, বাস, দোকানসহ সকল সেক্টরের শ্রমিক-মালিক,শিক্ষক-ছাত্রসহ নগরীর সকল অংশীজনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সড়ক ব্যাবস্থাপনা ও পরিকল্পনা কমিটি গঠন করতে হবে।
৪। অবিলম্বে জরিপের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক অটোরিকশার সংখ্যা ও মালিকানা নির্ধারণ করে আনুপাতিক হার পদ্ধতিতে সকলের চলাচলের রুট নিশ্চিত করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ভাবে নতুন বাহন বৃদ্ধি রোধে শ্রমিক সংগঠন সমুহের সহযোগিতা ও সমন্বয়ে কার্যকরী ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫। শ্রমিকনেতা আবু জাফরসহ গ্রেফতারকৃত সকল শ্রমিকদের মুক্তি ও মামলা পত্যাহার করতে হবে।
৬। দেশের সড়ক উপযোগী মডেল সকলের জন্য উন্মুক্ত করে বাহনসমূহের আধুনিকায়ন ত্বরান্বিত ও বাহন বিনিময় নীতি শ্রমিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নির্ধারণ করতে হবে।
৭। ব্যাটারিচালিত যানবাহন শ্রমিকদের ওপর জুলুম-নির্যাতন-চাঁদাবাজি, অবৈধ কার্ড-টোকেনের নামে চাঁদাবাজি যেন পুনরায় ফেরত না আসে তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
৮। ব্যাটারিচালিত যানবাহন গ্যারেজের ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করতে হবে।
৯। রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক ও সাইকেলের জন্য পর্যায়ক্রমে সকল সড়কে সার্ভিস লেন নির্মাণ করতে হবে। রিকশার জন্য নগরীতে নির্ধারিত স্ট্যান্ড চালু করতে হবে। বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার ভিত্তিতে রাস্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও ব্যাটারিচালিত যানের জন্য র্যাকার বিল কমিয়ে যৌক্তিক করতে হবে।
১০। “জীবিকা সুরক্ষায়" শ্রম সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।
১১।রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিকদের মানুষ হিসেবে নাগরিক অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। মানবিক ও দেশের অর্থনীতির বিবেচনায় ব্যাটারিচালিত যানবাহনের পুঁজিকে নিরাপদ করে পর্যায়ক্রমে প্যাডেল চালিত যানবাহনের পশু শ্রম থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে মহানগরীতে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল বন্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম এর উদ্যোগে পরিচালিত এই অভিযানে বহু রিকশা জব্দ ও একাধিক চার্জিং পয়েন্টের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এরপর থেকে নগরে ব্যাটারি রিকশা চলতে দেওয়া হচ্ছে না।
এসএ/সিলেট