চূড়ান্ত প্রার্থীর বিকল্প আরও দুইজন,...
সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থীর বিকল্প হিসেবে আরও দুইজনকে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। তবে প্রতিটি আসনে...
সিলেটের ১৯ আসন বিএনপির মনোনয়ন
সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থীর বিকল্প হিসেবে আরও দুইজনকে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। তবে প্রতিটি আসনে একজনকেই চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আর বিকল্প হিসেবে আরও দুইজনের নাম সংরক্ষণ করা হবে। নির্বাচিত প্রার্থীর কোনো কারণে সমস্যা দেখা দিলে বিকল্প তালিকার মধ্য থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। একই সঙ্গে যাঁরা এবার মনোনয়ন পাবেন না, তাঁদেরকেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিতে সক্রিয় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে দলীয় সূত্র।
এদিকে, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেককে দলের মিটিংয়ে ডাকা না হলেও গুলশান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। পরে দলের মহাসচিব তাদেরকে ডেকে নিয়ে শান্ত¦না মিটিং করে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই শান্ত¦না মিটিংয়ের ছবি কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে তারাও মূল মিটিংয়ে ছিলেন দাবী করেছেন। এগুলো চরম হাস্যকর। এমনটা জানালেন তৃণমূলের কর্মীরা।
কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খসরুজ্জামান পারভেজ বলেন, দলের প্রার্থী হওয়ার জন্য কেউ কেউ বিদেশ থেকে এসে নিজেকে বিশাল নেতা দাবী করে প্রচারণা চালাতে শুরু করেছিলেন, যাদের নাম গন্ধও এলাকার মানুষ শুনে নাই বিগত দিনে। আবার এমন কিছু ব্যাক্তি মাঠে প্রচারণা চালাতে দেখা গিয়েছে, যাদের একটা ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি হবার যোগ্যতা নাই। তাই এই সুযোগে ওই মিটিংয়ে এমন কিছু স্বপ্রচারণায় লিপ্ত ব্যাক্তিদের ডাকা হয়নি। এজন্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এ বৈঠক অনেকেই আগাছা ছাঁটাই প্রোগ্রাম হিসেবে আখ্যায়ীত করেছেন। আবার অনেকেই বিএনপির নমিনেশন কনফার্মেশন মিটিং হিসেবেও ধারণা করেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সিলেট বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে জেলা ওয়ারি আলাদা এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগের চার জেলার মোট ১৯টি আসনের ১২৯ জন প্রার্থী।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি আসনে ত্যাগী, যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাকেই চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, মনোনয়ন ঘোষণার পর সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। একজন প্রার্থী নির্ধারিত হলে বাকিদের দায়িত্ব হবে তাকে বিজয়ী করা। এছাড়া সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সংগঠন শক্তিশালী করা ও প্রচারণায় সক্রিয় থাকতে হবে। একইসঙ্গে সতর্ক করেছেন, প্রার্থীতার প্রচারণা করতে গিয়ে যাতে অভ্যন্তরীণ বিরোধ না দেখা দেয়। এমন ঘটলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দলীয় সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
এর আগে শনিবার সিলেট বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঢাকায় তলব করেছিল বিএনপি কেন্দ্র্র। বৈঠকে প্রতিটি আসনের সাংগঠনিক অবস্থা, মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয়তা, ভোটার সংযোগ ও সম্ভাব্য নির্বাচনী কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
দলীয় সূত্র আর জানায়, এবারের প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপি তথ্যভিত্তিক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে। প্রতিটি প্রার্থীর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে একটি ডিজিটাল ডেটাবেজে। এই ডেটাবেজে মূল পাঁচটি যোগ্যতা ও পাঁচটি অযোগ্যতার ঘর রাখা হয়েছে। সেসব ঘরে তথ্য পূরণ করলেই প্রার্থীর জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় র্যাংকিং তৈরি হয়, যা মনোনয়ন কমিটির কাছে পাঠানো হচ্ছে। কেবল বিশেষ কারণেই এই র্যাংকিংয়ের বাইরে গিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এছাড়া যোগ্যতা নির্ধারণে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে অতীত রাজনৈতিক কর্মকান্ড, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতি, জনসম্পৃক্ততা, সাংগঠনিক দক্ষতা, পারিবারিক ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য এবং ত্যাগ। অপরদিকে অযোগ্যতার মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী কর্মকান্ডে জড়িত থাকা, ফৌজদারি অপরাধের ইতিহাস, আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ, অপরাধে সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনী এলাকায় অগ্রহণযোগ্যতা। এই ১০টি সূচকের আরও উপশ্রেণি যোগ করে প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম সহ সভাপতি ও সিলেট-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মামুনুর রশীদ বৈঠক শেষে এ প্রতিবেদককে বলেন, সবাইকে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলীয় হাইকমান্ড পরবর্তীতে যে সিদ্ধান্ত নিবে সবাইকে সে সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলের মহাসচিব।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, এ মিটিং ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগে কেউ যেন দলীয় প্রচারণা নিয়ে বিভাজন সৃষ্টি না করে, সে বিষয়ে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক