পাথর কান্ডের পর এবার দোয়ারাবাজারে বালু হরিলুট

post-title

ছবি সংগৃহীত

সোহেল মিয়া, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ):: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর লুটের পর এবার সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে চলছে বালু লুট পাটের কান্ড। গত কয়েক'দিন ধরে রাতের আঁধারে এই অপকর্ম করছে বালুখেকোরা।

দিনের বেলাতেও নিত্যনতুন কৌশলে বালু- লুটপাট করে নিচ্ছে তারা। প্রশাসনের কঠুর নজরদারি আর রাত জেগে পরিচালিত অভিযানে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিন,ট্রাক,নৌকা আর মানুষ আটক করলেও থামছেনা বালু খেকুদের তান্ডব ।

উপজেলার সুরমা,চিলাই,মৌলা, মরাচেলা এবং বালু নদীসহ উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের ছোট-বড় খাল ও ফসলি জমি খনন করে এরইমধ্যে কোটি টাকার বালু লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে যেভাবে নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট, হুমকির মুখে পরিবেশ। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে বালু'র লুট ঠেকাতে টহল বৃদ্ধি করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার হাটবাজার ও জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে রাত-দিন দলবেঁধে থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর টহল লক্ষ করা গেছে। ইতোমধ্যে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি নৌকা, বালুভর্তি গাড়ি, মেশিন ও মানুষ আটক করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, উপজেলা প্রশাসন,সেনাবাহিনী এবং পুলিশ নিয়মিত অভিযানে দোয়ারাবাজার উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণে আছে।

যৌথবাহিনী এবং পুলিশের একক কয়েকটি অভিযানে বেশ কয়েকটি বালুভর্তি নৌকা, বালুভর্তি গাড়ি, বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত মেশিন ও বালু উত্তোলনকারীদের আটক করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ-সেনাবাহিনীর নিয়মিত অভিযান চলমান, থানা পুলিশের নৌ-টহল জোরদার করা হয়েছে।

তিনি জানান, দোয়ারাবাজারে ছোট -বড় নদীগুলোর প্রবেশপথ বেশি থাকায় অনেক সময় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে চায় বালু খেকুরা। প্রশাসন সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে তারা আবার সতর্ক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে স্থানীয়দের সহযোগিতা ও প্রয়োজন। স্থানীয়রা সহযোগিতা করলে পুলিশের কাজ করা আরও সহজ হবে।

দোয়ারাবাজার থানা পুলিশের জব্দ তালিকা সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে ৪টি ট্রাক,১২ টি নৌকা, ৬টি ড্রেজার মেশিন আটক করা হয়েছে এবং বালু উত্তোলনের দায়ে ৩৬ জনকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এতে সর্বশেষ, গত ১৮ আগষ্ট দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অরুপ রতন সিংহ'র নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নে মরা চেলানদীতে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে একটি ড্রেজার মেশিন এবং বালু পরিবহনে ব্যবহৃত একটি ট্রাক গাড়ি আটক জব্দ করেন। তবে এর সাথে জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি।

এর আগে, দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল হক'র নেতৃত্ব পরিচালিত আভিযানিক টিম গত ১৭ আগষ্ট উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের মৌলা নদী হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনপূর্বক পরিবহনকালে ১ টা পাওয়ার টিলার,আগষ্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে সুরমা ইউনিয়নের চিলাই নদীতে অভিযান চালিয়ে ৩ টা ইঞ্চিন চালিত নৌকা এবং ১০ আগষ্ট চিলাই নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে ১ টি ইঞ্চিন চালিত নৌকাসহ ৪ জনকে আটক করেন।

এছাড়াও, জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে চিলাই নদীতে অভিযান চালিয়ে ৪ টা ইঞ্চি চালিত কাঠের নৌকা আটক করে থানা পুলিশ, ২ জুলাই নরসিংপুর ইউনিয়ন হতে বালু বালুভর্তি একটি ডিআই পিকআপ গাড়িসহ ১জনকে আটক পূর্বক কারাগারে পাঠানো হয়। ৬ জুলাই উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নে বালু উত্তোলনের দায়ে ৩ জনকে আটকপূর্বক বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমান আদালত।

জুন মাসে সুরমা ইউনিয়নের খাসিয়া মারা নদীর আলীপুর ব্রীজের নীচ থেকে বিনা ইজারায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ৪ জনকে আটক করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে ভ্রাম্যমান আদালত। ১৫ এপ্রিল নরসিংপুর ইউনিয়ন হতে একটি ডিআই পিকআপ গাড়িসহ ১ জনকে আটকপূর্বক কারাগারে প্রেরন করেন ভ্রাম্যমান আদালত। 

২৩'শে' মার্চ যৌথবাহিনীর অভিযানে উপজেলার সুরমা নদীতে অভিযান চালিয়ে বালুভর্তি ৪ টা স্টিলবডি নৌকা,৫ টা ড্রেজার মেশিনসহ ২৩ জনকে আটক করে থানা পুলিশ। পরে দোয়ারাবাজার থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের পূর্বক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান।

এদিকে, গত ১৬ আগষ্ট রাতে বোগলাবাজার ইউনিয়নের বাঘমারা এলাকায় চিলাই নদীর পাড় কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে নৌকাসহ আটক করা হয় একটি চক্রকে। পরে স্থানীয়ের মারধর করে জোরপূর্বক নৌকা ছিনিয়ে আনে চক্রটি। এঘটনায় ওইদিন সন্ধায় বাঘমারা গ্রামের ইউনুস আলী'র পুত্র মানিক মিয়া বাদী একই গ্রামের তিনজনের নাম উল্লেখ করে দোয়ারাবাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এবিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুপ রতন সিংহ জানান, বালু লুটে দোয়ারাবাজারে প্রশাসনের আভিযানিক কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বালুভর্তি গাড়ি,নৌকা,মেশিন ও বালু শ্রমিকদের আটক করা হয়েছে।

দোয়ারাবাজার হতে অবৈধভাবে বালু লুটপাট করে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের তালিকা করা হচ্ছে। সঠিক তথ্য পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসএ/সিলেট