সুবিচার নিশ্চিত করতে সুশাসনের বিকল্প...
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজা-উন-নবী বলেছেন, পৃথিবীর সকল জাতি গোষ্ঠীর সাথে পরিমাপ জড়িত। সৃষ্টির কোন কিছুই পরিমাপের বাইরে নেই। তাই সমতার সমাজ রাষ্ট্র ও...
ছবি সংগৃহিত
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় ঝড়বৃষ্টি, বজ্রপাত ও বন্যার শঙ্কায় তড়িঘড়ি করে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন কৃষকরা।
ইতিমধ্যে উপজেলার বেশকিছু এলাকায় ধান কাটা ও মাড়াই শুরুও হয়েছে। বিশেষ করে গত চার-পাঁচদিন থেকে মেঘালয়ের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ইতোমধ্যে উপজেলার প্রধান নদী সারী নদী, কাফনা নদীসহ বড়গাঙ, রাংপানি নদী ও শাখা-প্রশাখাগুলো ঢলের পানিতে ভরে গেছে।
জানা যায়, আগামী এক সপ্তাহ উজানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় অবশিষ্ট ধানগুলো কেটে গোলায় তোলা নিয়েও শঙ্কা বিরাজ করছে কৃষকদের মাঝে।
এজন্য কৃষকরা ধানকাটা শ্রমিক দলকে আগাম মজুরি দিয়ে রাখছেন। যাতে দ্রুত খেতের ধান কেটে ঘরে তোলা যায়। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে এই চিত্র মিলেছে।
উপজেলার- ফতেপুর (হরিপুর), চিকনাগুল, দরবস্ত, চারিকাটা, নিজপাঠ ও জৈন্তাপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ধান পেকেছে। কোথাও ধান পাকতে আরো দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। এ অবস্থায় ঝড়বৃষ্টি ও বন্যার শঙ্কায় ধান কাটা মাড়াই শুরু করেছেন কৃষকরা। উপজেলায় বছরে দুই থেকে তিন বার ধান উৎপাদন হলেও বোরো ধানের ফলন বেশি হয়। যদিও এ ধান উৎপাদনে খরচ বেশি হয়। সাধারণত বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বোরো ধান মাড়াই শুরু করেন উপজেলার কৃষকরা। কিন্তু এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকটা শঙ্কা নিয়ে দ্রুত ধান মাড়াই করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
কৃষকরা জানান, বীজ, সার, সেচ ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। শ্রমিক মজুরিও বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই বোরো ধানে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। অপর দিকে বৈরী আবহাওয়ায় প্রায় প্রতি দিনই আকাশ কালো করে মেঘে ছেয়ে যায়। পাকা ধান শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখী বা বন্যার কবলে পড়লে ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে । সেই শঙ্কায় কিছুটা আগাম ধান মাড়াই শুরু করেছেন তারা। ফলনে খুশি হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। সরকারিভাবে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধানের মূল্য এক হাজার ৪শত ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও স্থানীয় বাজারে ১০৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার ফতেপুর (হরিপুর) বালিপাড়া গ্রামের কৃষক মাহমুদ আলী বলেন, প্রতিদিনই আকাশে মেঘ জমে। এবার শিলাবৃষ্টি হলে একটা ধানও ঘরে তোলা যাবে না। তাই ধান পাকা শুরু হতেই কাটা শুরু করেছি। বাকি দিনগুলো আবহাওয়া ভালো থাকলে সব ধান ঘরে তোলা যাবে। নয়তো লোকসান গুনতে হবে।
উপজেলার দরবস্ত মানিকপাড়া গ্রামের কৃষক রফিক আহমেদ বলেন, ফলন যা হয়েছে এতে আমরা খুশি। ধান ঘরে তোলা থেকে বিক্রি পর্যন্ত সব ঠিক থাকলে লাভবান হবো। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে আকাশ মেঘলা রয়েছে। শিলাবৃষ্টি হলে ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে।
উপজেলার ফতেপুর (হরিপুর) বালিপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, প্রতি বিঘা (৬০ শতাংশ) জমির ধান কেটে বাড়িতে আনতে কৃষি শ্রমিকের দলকে সাড়ে ১০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। সেই ধান মেশিনে মাড়াইয়ের জন্য ১৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। গেল বছর এই ধান কাটা মজুরি ছিল সাড়ে ৫-৬ হাজার টাকা আর ধান মাড়াই করা হতো ৬০০ টাকায়। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাই মজুরি বেশি। জ্বালানি তেল ও মেশিনের যন্ত্রপাতির দাম বাড়ার কারণে ধান মাড়াইয়ে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, চলতি মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জৈন্তাপুরের বাস্তবায়নে ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি এসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট (ফ্রিপ) প্রকল্পের আওতায় উজেলার কৃষক পর্যায়ে সিড ভিলেজ বোরো ধানের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গত চার-পাঁচদিনের ভারী বর্ষণে উপজেলার নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও এখনও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়নি। বিষয়টি উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। কিছুদিন পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কর্তন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হাওরাঞ্চলের ধান শতভাগ কর্তন করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে থেকে কৃষকদের সার্বিক দিকনির্দেশনা প্রদান ও মনিটরিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।
এসএ/সিলেট