দুর্ঘটনায় কবলিত শাবি শিক্ষকদের বাস
ট্রাকের ধাক্কায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষকদের একটি বাস। সোমবার (২০ জানুয়ারি) টিলাগড় থেকে...
ফয়সল আহমদ রুহেল:: শ্রদ্ধেয় মো. আব্দুল জব্বার শিক্ষার্থীদের নানাভাবে অনুপ্রেরণা দিয়ে তাদের জীবন প্রভাবিত করেন। কর্মজীবন তাঁর অনেক বৈচিত্র্যময়। আর সে জীবনের বাঁকে বাঁকে অগনিত সফলতার গল্প বোনা। শিক্ষকতা পেশার প্রতি অনেক বেশি দায়িত্বশীল ছিলেন। শিক্ষাকে সহজ ও সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছিয়ে দিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। তিনি সুদীর্ঘ ৩৩ বছর সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে অবসরে যান।
জন্ম: শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. আব্দুল জব্বার ১৯৪৯ ইং সনের ১০ই জানুয়ারী সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার পুরানঘাট গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুস সামাদ ও মাতা আবিলজান। শিক্ষকের আরো তিন বড় ভাই ছিলেন। তারা কেহই বেঁচে নেই। নিকটবর্তী বড় ভাই আব্দুল মালেক। স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৯৩ সালে পরলোক গমন করেন।
শিক্ষা জীবন : মো. আব্দুল জব্বার এর দীঘলবাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু। এখান থেকে ১৯৫৯ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। পরে ১৯৬৪ সালে সাতগাঁও জুনিয়র স্কুলে ৬ষ্ট শ্রেনিত ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করেন। তারপর ১৯৬৩ সালে তাহিরপুর পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। দশম শ্রেনিতে উত্তীর্ণ হবার কিছুদিন পর ১৯৬৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এক দুরারোগ্য ব্যাধি- হার্নিয়ায় আক্রান্ত হন। অনেক চিকিৎসার পর সাময়িক সুস্থ হন, রোগ থেকেই য়ায়। এমতাবস্থায় ১৯৬৫ সালে কমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তৃতীয় বিভাগে পাস করেন।
পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সালে- সুনামগঞ্জ কলেজে একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হন। এ সময়েও সেই দুরারোগ্য ব্যাধি হার্নিয়া মাঝে মধ্যে আঘাত করে। যার ফলে শিক্ষাগ্রহনে বাধা সৃষ্টি করে। ১৯৬৮ সালে সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং কোন ক্রমে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরস্পর দুবার নিম্ন মানের ফলাফলের দরুন শিক্ষাগ্রহণের প্রতি অনীহা আসে। ১৯৬৯ সালে মাতা মারা যান। পরের বছর ১৯৭০ সালে পিতাও ইন্তোকাল করেন। এখানে মো. আব্দুল জব্বার এর শিক্ষাগ্রহণ সমাপ্ত হয়। তিনি ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১ দেশের গণ-অভ্যুত্থান ও স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে কাজ করেন।
কর্মজীবন : মো. আব্দুল জব্বার দেশ স্বাধীন হবার পর নতুন চিন্তাভাবনা শুরু করেন। শিক্ষাকে সহজ ও সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছিয়ে দেবার মানসে গ্রামের কিছু সংখ্যক শিক্ষানুরাগী যুবক নিয়ে পুরান ঘাট গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বিদ্যালয়টি সরকারের তত্ত্বাবধানে চলছে। পার্শ্ববর্তী গ্রাম- মাহারাম, সেখানে কিছু সংখ্যক বিদ্যোৎসাহি ব্যক্তি নিয়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। যা ১৯৭৫ সাল থেকে সরকারী তত্ত্বাবধানে চালু রয়েছে। এ দুটো প্রাথমিক বিদ্যালয় করার পর ১৯৭৬ সালে শিক্ষক হিসেবে বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। নিরবিচ্ছিনভাবে তেত্রিশ বছর শিক্ষকতা পর ২০০৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
হাইস্কুল স্থাপন : শিক্ষার আলোকে আলোকিত করার লক্ষ্যে অত্র ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আবু তাহের সাহেব ব্রাহ্মনগাঁওয়ে ১৯৯৯ সালে একটি হাইস্কুল স্থাপন করেন। পরের বছর তিনি মারা সান। সুষ্ঠু পরিচালনার অভাবে বিদ্যালয়টির শিক্ষাদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১২ বছর বন্ধ থাকার পর, মো. আব্দুল জব্বার অবসরে আসার পর স্থানীয় কিছু সংখ্যক শিক্ষানুরাগী লোকের অনুরোধে ২০১১ সালে এই পতিত গৃহটিতে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী আর তিনজন শিক্ষক নিয়ে শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু করেন। সকলের প্রচেষ্টায় ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সিলেট শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক জুনিয়র স্কুল হিসেবে পাঠদানে অনুমতি প্রদান করে।
দুবছর পর ২০১৫ সালে সিলেট শিক্ষা বোর্ড নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ঐ বছরই শেষ ভাগে পূর্ণাঙ্গ হাইস্কুল হিসেবে বোর্ড স্বীকৃতি প্রদান করে। ২০১৭ সাল থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করা হয়। এখন তিনি ও কিছু বিদ্যোৎসাহি লোক সমন্বয়ে পরামর্শ ক্রমে পুরানঘাট গ্রামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন। কলেজ স্থাপনের অবকাঠামোগত কাজ ও শিক্ষার্থী ভর্তি করণ ও পাঠদানের অনুমতি ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে।
পারিবারিক : মো. আব্দুল জব্বার পারিবারিক জীবনে তিন সন্তানের জনক। তাদের নাম- জুবায়ের আতিক, জাহিদ আনওয়ার (রাসেল) ও সরওয়ার-এ-কায়নাত। তারা কেউই উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে পারেননি। জীবিকা নির্বাহে জন্য বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্মে কর্মরত রয়েছেন।
২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুণী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সুনামগঞ্জ জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাহিরপুর উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার ২৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ২৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
শ্রদ্ধেয় মো. আব্দুল জব্বার তার ন্যায়পরায়নতা, কর্মদক্ষতা, সততা ও সময়ানুবর্তিতা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। তিনি শিক্ষার্থদের যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. আব্দুল জব্বার শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়েছেন। জীবনভর শিক্ষার মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। তাঁর অবসর জীবনের মঙ্গল কামনা করি ।
এসএ/সিলেট