সিকৃবিতে আন্তঃহল ক্রিকেট খেলার...
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ টি আবাসিক হলের আন্তঃহল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করা হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) পরিচালক (অর্থ ও হিসাব শাখা) প্রফেসর ড....
ফয়সল আহমদ রুহেল:: হাইস্কুলটি নিজ গ্রাম থেকে ছিল অনেকটাই দূরে। পায়ে হেঁটে যেতেন প্রায় ছয় থেকে সাত কিলোমিটার। বর্ষায় ছোট ডিঙ্গি নৌকা হাতে চালিয়ে স্কুলে যেতেন। কলেজে পড়াকালীন সময়ে লজিং থাকতে হয়েছে। তার কর্মজীবনে অনেক শিক্ষার্থীকে পড়িয়েছেন, সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়েছেন পুস্তকি জ্ঞানের পাশাপাশি মানবিক জ্ঞানের আলো।
তিনি একজন সমাদৃত জ্ঞানের বাতিঘর, যিনি কর্মজীবনে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রদীপ জ্বালিয়েছেন। এই সফল ও গুনী মানুষটি হলেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মোস্তফা কামাল শাহ। তিনি তাহিরপুর ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প জুনিয়র হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
জন্ম : শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মোস্তফা কামাল শাহ ১৯৪৮ সালে ১ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বীরনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত দোস্ত মোহাম্মদ শাহ ও মাতা জয়গুন বিবি। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শিক্ষক দ্বিতীয়।
শিক্ষাজীবন: মোস্তফা কামাল শাহ প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন উজান তাহিরপুর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ১৯৫৫ সালে উজান তাহিরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৬১ সালে বালিজুরি মাদ্রাসায় দাখিল আউয়াল শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখানে দাখিল দশম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যায়ন করে মাদ্রাসায় পড়া থেকে বিরত থাকেন।
১৯৬৬ সালে তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (তখন বেসরকারি ছিল) অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ১৯৬৯ সালে মেট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৭১ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে (তখন বেসরকারি ছিল) আইএ পরীক্ষা দিবেন তখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ লেগে যায়। যুদ্ধের জন্য তখন আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এরপর দ্বিতীয় বিভাগে আইএ পাস করেন। ওই কলেজে বিএ তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত অবস্থায় পারিবারিক সমস্যার কারণে পড়ালেখার ইতি টানতে হয়।
স্মরণীয় ঘটনা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ালেখা করতে হতো। গ্রীষ্মকালে পায়ে হেঁটে এবং বর্ষায় ছোট ডিঙ্গি নৌকা ছিল। ওই নৌকা নিজে চালিয়ে স্কুলে যাওয়া লাগতো। মাদ্রাসা পরাকালীন সময়ে লজিংয়ে থেকে পড়ালেখা করতে হয়েছে। হাইস্কুলটি নিজ গ্রাম থেকে ছিল অনেকটাই দূরে যার দারুন পায়ে হেঁটে যাওয়া লাগতো প্রায় ছয় থেকে সাত কিলোমিটার এবং বর্ষার সময় ওই ছোট ডিঙ্গি নৌকা হাতে চালিয়ে স্কুলে যাওয়া লাগতো। কলেজে পড়াকালীন সময়ে লজিং থাকতে হয়েছে। লজিং বাড়ির সবাই খুব আদর করতেন।
শিক্ষকতা জীবন : তিনি ১৯৭৬ সালে প্রথম সাতগাঁও মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুই বছর শিক্ষকতা করেন। এরপর ১৯৮১ সালে ঘুঙ্গাদিয়া-বড়দেশ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৩ সালে ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প জুনিয়র হাইস্কুলে চার বছর শিক্ষকতা করার পর স্কুলটি পূর্ণাঙ্গ হাইস্কুলে পরিণত হয়। এরপর ২০০৩ সালে অবসরে যান।
সংগঠক: উল্লেখ্য: মোস্তফা কামাল শাহ দুর্নীতি দমন কমিশন এর তাহিরপুর উপজেলার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির ২০০৬ সালে সেক্রেটারি পদে নিয়োজিত হন। এরপর ২০১৩ সালে সভাপতি পদে নিয়োজিত হয়ে এখন পর্যন্ত সভাপতি পদে বহাল আছেন। তাহিরপুর উপজেলায় সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৮ সালে খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া সম্মাননা পদক পান।
পারিবারিক জীবন: মোস্তফা কামাল শাহ ১৯৮০ সালে তাহিরপুর উপজেলার বড়দল গ্রামের মো. বদর উদ্দিন তালুকদার সাহেব এর তৃতীয় কন্যা শামছুন নাহার এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহ হতে এখন পর্যন্ত সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন করছেন। এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার। ছেলে শাহ আবু হামেদ মোহাম্মদ আল রাযী বিএ/ বিএসএস তৃতীয় বর্ষে
অধ্যায়নরত।
২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুণী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সুনামগঞ্জ জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাহিরপুর উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার ২৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ২৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
মোস্তফা কামাল শাহ বহু মানুষ গড়ার কারিগর। একজন অনুকরণীয় ব্যক্তি যাকে দেখে তাঁর ছাত্ররা শিখে, যার কাছে জীবনের পাঠ পায়। তার কর্মজীবনে অনেক শিক্ষার্থীকে পড়িয়েছেন, সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তারা দেশের কল্যাণে অনেক বড় বড় জায়গা থেকে ভূমিকা রাখছেন। তিনি তার শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজের কাজের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আজীবন। তাঁর অবসরকালীন জীবন সুখে স্বাচ্ছন্দে ও সুস্থভাবে কাটাতে পারেন সে আর্শিবাদ কামনা করছি।
এসএ/সিলেট