স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা

মামলা করানো হয় ভয় দেখিয়ে, দাবি বাদীর

post-title

মামলার বাদী কুলসুম বেগম

জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা করা নারী কুলসুম বেগমসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কুলসুম দাবি করেছেন, তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলাটি করানো হয়েছে।

আটক অন্য দু’জন হলেন– মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার টেপড়া গ্রামের রুহুল আমিন এবং ঘিওর থানার ফুলহারা গ্রামের শফিকুর রহমান। কুলসুম বেগম ঘিওরের স্বল্পসিংজুরি বাঙলা এলাকার আব্দুল খালেকের মেয়ে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় নিহত একজনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। সেই লাশ নিজের স্বামী আল-আমিনের দাবি করে ২৪ অক্টোবর ঢাকার একটি আদালতে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন কুলসুম। পরে মামলাটি ৮ নভেম্বর আশুলিয়া থানায় রেকর্ড করা হয়। এজাহারে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিকেলে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বিজয় মিছিলে ছিলেন আল-আমিন। সেখানে পরাজয় মেনে না নিতে পেরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বিচার গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আল-আমিন মারা যান। পরে ১৩ নভেম্বর আল-আমিন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়ে নিজের জীবিত থাকার বিষয়টি পুলিশকে জানান।

আটক কুলসুম পুলিশকে জানিয়েছেন, চার বছরের সন্তানকে নিয়ে স্বামী আল-আমিনের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় থাকতেন তিনি। দাম্পত্য কলহের জেরে কুলসুম গত ২৮ আগস্ট সেখান থেকে সাভারে বোনের কাছে চলে যান। পথে গাড়িতে শফিকুরের সঙ্গে পরিচয়ের এক পর্যায়ে কুলসুম জানান, তিনি চাকরির জন্য সাভারে এসেছেন। এই সুযোগে তাঁকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রুহুলের কাছে নিয়ে যান শফিকুর। পরদিন দু’জন চাকরির জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ চেয়ে কুলসুমের সঙ্গে সাভারের সেনা শপিং কমপ্লেক্সে দেখা করেন। কয়েক দিন পর জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা প্রস্তুত করেছেন বলে কুলসুমকে জানান তারা। তিনি রাজি না হলে তারা ভয়ভীতি দেখিয়ে আদালতে নিয়ে উকিলের সামনে কাগজে সই নেন।

কুলসুম বলেন, ‘রুহুল ও শফিকুর ব্ল্যাকমেইল করে মামলা করতে বাধ্য করেছে। পরে আমাকে কক্সবাজারে বাসা ভাড়া করে দিয়ে থাকতে বলে।’

কুলসুমের বোন ফাতেমা বলেন, ‘আমার বোনকে রুহুল নানাভাবে ভয় দেখিয়েছে। সে বলেছে, মামলা করা হবে, ফাঁসি হবে। এমনকি সব সময় কাছে পিস্তল থাকে বলেও ভয় দেখিয়েছে রুহুল। পরে সে বেশ কয়েকজনের নাম মামলা থেকে কেটে দিয়েছে। সে সময় তারা আমার বোনকে আদালতে নিয়ে যায়। তারা বলত, অজ্ঞাত ছেলেটা মারা গেছে, সে যেন বিচার পায়। সেজন্য এই মামলা করেছে। পরে বুঝতে পারি, তারা একটি চক্র এবং মামলা বাণিজ্যে জড়িত। আমার বোন আশুলিয়া কিংবা সাভারে থাকত না। সে থাকত সিলেটে। শফিকুর ও রুহুল আমার বোনকে ফাঁসিয়েছে।’

এ ব্যাপারে শফিকুর বলেন, ‘কুলসুমের সঙ্গে আমার গাড়িতে পরিচয় হয়। পরে তাঁকে নিয়ে আমি রুহুলের কাছে যাই। সে-ই মামলার সব কাজ করেছে।’

এদিকে রুহুল আমিন বলেন, ‘কুলসুমই আমার কাছে মামলা করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছিল।’ টাকার বিনিময়ে আসামি তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মনোয়ার, বাশার ও সারোয়ার তালুকদারের নাম মামলা থেকে বাতিলের জন্য এফিডেভিট করা হয়েছে। তবে তাদের কাছে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।’

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনজন মিথ্যা মামলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। শনিবার কুলসুমকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হবে। এর পর নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।

এসএ/সিলেট