বাংলাদেশ সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে...
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেছেন, ছাত্র-জনতার দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে দেশ ফ্যাসিস মুক্ত হয়েছে। অন্য কোনো দেশের চোখ রাঙানি...
মদন মোহন কলেজে চাকুরীতে যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. সাজেদুল করিম বলেছেন, ‘যেখানে শিক্ষকদের প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কোন স্বাধীনতা নেই, বুঝতে হবে- সেখানে কোন শিক্ষাব্যবস্থাই নেই। ফ্যাসিস্ট সরকার পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দিয়েছিল। অধ্যাপক ফরিদ আহমদের সাথে যা করা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ জুলুম' ।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) মদন মোহন কলেজের অধ্যাপক ফরিদ আহমদের চাকুরিতে যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে এক যুগ পূর্বে মদন মোহন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমদকে ‘প্রশ্নপত্রে ভুলের’ অভিযোগে চাকুরি থেকে অপসারণ করা হয়।
এক যুগ পরে তিনি আবারো চাকুরিতে যোগদান করলেন। এ উপলক্ষে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন তরফদার।
সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট প্রেসক্লাবের হল রুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ সিলেট জেলার আহ্বায়ক ডা. শামিমুর রহমান, শাবিপ্রবির চীফ ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল ইসলাম চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সহসভাপতি খালেদ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। ফ্যাস্টিরা সমাজের প্রতিটি স্তরে জুলুম প্রতিষ্ঠা করেছিল উল্লেখ করে প্রধান অতিথি ড. সাজেদুল করিম বলেন, ‘দেশের ব্যাংক, শেয়ারবাজার লুটসহ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আস্থাহীন খাতে পরিণত করেছিল। একইভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। বিশেষ সংগঠনের ছাত্র হলে ও অন্যদের দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলতে পারলেই পাশ করার ব্যবস্থা ছিল। যারাই সরকারের আজ্ঞাবহ হয়নি, তারাই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনিসহ তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫জন শিক্ষককে কতল করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।’
তিনি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় বাড়ি একজন শিক্ষামন্ত্রী নামোল্লেখ না করে বলেন, স্কুলের শিক্ষাকে সহজ ও উপভোগ্য করতে পারলে মাদরাসা শিক্ষায় ছাত্র কমবে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন। আমাদের নৈতিক শিক্ষা ধ্বংসের মূল উদ্যোক্তা ওই শিক্ষামন্ত্রী। আমাদের বই কে লিখছেন, জানা যায় না, পরে শোনা যায় পাশের দেশের বিশেষ গোষ্ঠীর লোকদের দিয়ে লেখা হয়েছে ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে বিপ্লব অর্জিত হয়েছে। এখন একে ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। ছাত্ররা ইনসাফের দায়িত্ব পালন করেছে এখন আমরা মাঠে থাকলে ফ্যাসিস্টদের দোসররা ষড়যন্ত্র করার সাহস করবে না' ।
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সংবর্ধিত অতিথি অধ্যাপক মো. ফরিদ আহমদ আবেগ, আপ্লুত হয়ে পড়েন। এসময় তিনি বলেন, ‘কলেজের অভিভাবক শিক্ষক দ্বারা চাকুরিচ্যুত হওয়া দুঃখজনক। কলেজের প্রধান হিসেবে তাকে এতই শ্রদ্ধা, সম্মান ও সহযোগিতা করতাম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তার হাতেই চাকুরিচ্যুত হতে হওয়া অবর্ণনীয় । তিনি বলেন, চাকুরিচ্যুত হওয়ার পর স্ত্রী কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভারতে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহর উপরে ভরসা রেখে কখনো ভেঙে পড়েননি। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা ফ্যাসিস্টদের বিচার করেছেন' ।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ সিলেট জেলার সমন্বয়ক ডা. শামিমুর রহমান বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিটি ইনিস্টিটিউট ধ্বংস করেছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অযোগ্য-অদক্ষ দলীয় লোকদের নিয়োগ-পদোন্নতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে পঙ্গু করে দিয়েছে। ফ্যাসিস্টরা পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা আছে। এরা বিপ্লব করার চেষ্টা করছে। এব্যাপারে আমাদের প্রত্যেককে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে' ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জুলাই বিপ্লবে শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। এসময় বক্তারা বিগতদিনে কলেজ সরকারিকরণের নামে ২০১৮ বিধির মাধ্যমে শিক্ষকদের বঞ্চিত করা, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বদলির ক্ষেত্রে ৩ বছরের মধ্যে পূর্বে প্রতিষ্ঠানে ফিরতে পারবে না, প্রধান শিক্ষক হতে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে অভিজ্ঞতা বাধ্যমাতমূলক করে ফ্যাসিস্টদের নিজেদের লোক পদায়নের আইন সংশোধনের দাবি জানান।
তারা অধ্যাপক ফরিদ আহমদের বীরের বেশে ফিরে আসায় মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এবং তার পরবর্তী কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সাংগঠনিক সচিব লে. মো. মনিরুল ইসলাম এবং বাকশিস সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুনিম পারভেজ এর যৌথ পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, এম সাইফুর রহমান টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক জিল্লুর রহমান শোয়েব, বাশিস সিলেট জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ এ কে এম সিফত আলী, বাকশিস সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোর্শেদ আলম, মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা রওনক আহমদ, আল কুরআন শিক্ষা পরিষদ বাংলাদেশ সিলেটের সভাপতি শায়খুল কোররা মাওলানা ক্বারী সিরাজুল ইসলাম, তাজপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক মো. খসরুজ্জামান, বাশিস সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. আব্বাস আলী, নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক এম এ বায়েছ, সিলেট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবু নছর মো. সুফিয়ান, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আমিনুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, অধ্যাপক, প্রভাষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।
এসএ/সিলেট