গার্ড অব অনার শেষে সবুজবাগের কালীমন্দিরে সুজেয় শ্যামের শেষকৃত্য

post-title

ছবি সংগৃহীত

রাষ্ট্রীয় সম্মানে সিক্ত হয়ে চিরবিদায় নিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুজেয় শ্যাম। শুক্রবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে সুজেয় শ্যামের মরদেহ নিয়ে আসা হয় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। যেখানে একাত্তরের সহযোদ্ধা, সহশিল্পী আর স্বজনরা শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন।

এরপর ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই গীতিকার ও সুরকারের কফিন মুড়িয়ে দেওয়া হয় জাতীয় পতাকায়। পুলিশের একটি দল সেখান এই শিল্পীকে গার্ড অব অনার দেন। এসময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর।
ঢাকেশ্বরীতে একাত্তরের এই কণ্ঠযোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তার সহশিল্পী শাহীন সামাদ, তিমির নন্দী, খোরশেদ আলম,মামুনুর রশীদ, শুভ্র দেবসহ অনেকে৷

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সুজেয় শ্যামের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাসাবোর সবুজবাগে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে। সেখানেই দুপুরে সুজেয় শ্যামের মরদেহ সৎকার সম্পন্ন হয় বলে জানান তাঁর মেয়ে লিজা।

দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন সুজেয় শ্যাম। সম্প্রতি তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রে ‘পেসমেকার’ বসানো হয়। পরে প্রবীণ এই শিল্পীর শরীরের ভেতরে সংক্রমণ হয়। সংক্রমণ পরে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসও ছিল অনিয়ন্ত্রিত। কিডনির সমস্যাও ছিল। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ২টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

সুজেয় শ্যামের সুর করা গানগুলোর মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয় রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘শোন রে তোরা শোন’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন তিনি, গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদক এবং এর আগে ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সনদ পান সুজেয় শ্যাম। তার আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো ভাতা পেতেন না বরেণ্য এই সুরকার ও সংগীত পরিচালক, গত ছয় বছর ধরে তা পাচ্ছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানের সুর করেন সুজেয় শ্যাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সুজেয় শ্যামের অন্য গানগুলোর মধ্যে আছে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয় রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’ ও ‘শোন রে তোরা শোন’।

ইউনিলিভারের প্রযোজনায় ২০০৯ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৫০টি গান এই প্রজন্মের শিল্পীদের দিয়ে নতুন সংগীতায়োজনে গাইয়েছেন সুজেয় শ্যাম, তাঁকে সহযোগিতা করেন পার্থ বড়ুয়া। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০১৪ সালের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়, এটিরও সংগীতায়োজন করেন সুজেয় শ্যাম।

সুজেয় শ্যাম ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন ‘ইন্দ্রেশর-টি’ নামের একটি চা-বাগানের মালিক। তাঁর শৈশব কেটেছে সিলেটের চা-বাগানে। দশ ভাই–বোনের মধ্যে সুজেয় ছিলেন ষষ্ঠ

এসএ/সিলেট