বাংলাদেশে তুর্কি বিনিয়োগ বাড়ানোর...
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে তুর্কি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ঢাকা এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত এবং উভয় দেশকে তাদের...
চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ আনসার সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে তাদের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে শিক্ষার্থীদের পাল্টা হামলায় তারা সচিবালয় ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় সচিবালয় এলাকা থেকে দুই নারী সদস্যসহ প্রায় চার শতাধিক আনসার সদস্যদের হেফাজতে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে সাধারণ আনসার সদস্যরা। পরে সমন্বয়কারীদের আহবানে সচিবালয়ে তাদের উদ্ধারে আসে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সচিবালয়ের দুই ও তিন নম্বর গেট এলাকায় শিক্ষার্থীরা পৌঁছালে আনসার সদস্যরা তাদের ওপর হামলা করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তাদের ওপর আন্দোলনকারী আনসার সদস্যরা লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করেছে।
পুলিশ হেফাজতে নেওয়া সদস্যদের ঢাকার শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও মতিঝিলসহ আশপাশের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, তাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হতে পারে। রাত আড়াইটা পর্যন্ত সচিবালয় গেট থেকে আটক আনসার সদস্যদের পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে বিভিন্ন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সরেজমিনে রাত দুইটা দিকে সচিবালয়ের দুই নম্বর গেটে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনে অংশ নেওয়া যেসব আনসার সদস্য শিক্ষার্থীদের হামলা থেকে বাঁচতে সচিবালয়ের মধ্যে অবস্থানে নেয়। তাদেরকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে এসে রাস্তার উপরে দাঁড় করে রাখা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় চারপাশে সেনাবাহিনী সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।
এর আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সচিবালয় থেকে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা এই অফিসারকে শিক্ষার্থীদের হামলা থেকে বাঁচিয়ে আবার সচিবালয়ের ভিতরে প্রবেশ করান। গভীর রাত পর্যন্ত ওই অফিসারকে বের হতে দেখা যায়নি।
রোববার সকাল আটটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত আন্দোলনকারী আনসার সদস্যরা প্রেসক্লাব ও কদম ফোয়ারা এলাকায় রাস্তায় ব্যারিগেট ফেলে আন্দোলন করে। পরে তারা জিরো পয়েন্ট থেকে সচিবালয় রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরই মধ্যে তাদের একটি অংশ সচিবালয়ের মধ্যে প্রবেশ করে আন্দোলন শুরু করে। সর্বশেষ বিকেলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ তিন উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেন। সেখানে তাদের রেস্ট ছুটি বাতিলসহ কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়া হয়।
এতে সাধারণ আনসার সদস্যদের একটি অংশ আন্দোলন স্থগিত করে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। পরে আবার আরেকটি অংশ চাকরি জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত সচিবালয় থেকে তারা বাসায় ফিরবে না বলে ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। এরই মধ্যে রাত আটটার দিকে পাঁচ উপদেষ্টার সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসে তারা। তখনও উপদেষ্টাদের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে না পেরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এতে সকাল থেকে সচিবালয়ের মধ্যে অবরুদ্ধ হওয়া কর্মকর্তা - কর্মচারীরা আটকে পড়ে। সর্বশেষ রাত ৯টার পরে সমন্বয়কদের আহ্বানে সচিবালয় থেকে এসব কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্ধার করা হয়।
রাত দশটা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের মধ্য থেকে এক নম্বর ভবনের সামনের গেট দিয়ে প্রথম একটি অ্যাম্বুলেন্স বের হয়। তারপর সারিবদ্ধভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী গাড়ি গুলো একে একে বের হতে থাকে। এ সময় গেটের দুই পাশে সেনা সদস্য ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপত্তা দেন। এদিকে সচিবালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মুখে আতঙ্কের ছাপ থাকলেও তারা হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান শিক্ষার্থীদের।
এর আগে রাত সাড়ে দশটার দিকে উপদেষ্টা নাহিদ ও সমন্বয়ক সারজিস আলম সচিবালয়ের এক নম্বর ভবনের পাশে বের হওয়ার গেটে এসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেসব আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে তাদের রাতের মধ্যে গ্রেপ্তার করার দাবি করছি। তাদের আইনের মুখোমুখি করা হবে।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. সারোয়ার বলেন, চার শতাধিক আন্দোলনরত সাধারণ আনসার সদস্যদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রাতে পল্টন শাহবাগসহ আশপাশের এলাকায় দাবি আদায়ের আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আনসার সদস্যদের আটক করতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এসব এলাকা থেকেও বেশ কিছু আনসার সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হবে বলে জানা গেছে।
এসএ/সিলেট