যে কারণে দীর্ঘদিন কর্মবিরতিতে শাবিপ্রবি শিক্ষকরা

post-title

ফাইল ছবি

গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের পেনশন সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়, সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর ধারা ১৪ এর উপ-ধারা (২) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং এর অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী, তারা যে নামেই অভিহিত হোন না কেন, ১ জুলাই ও তার পরে নতুন যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করা হবে।

উক্ত নীতিমালা জারি করার পর থেকেই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় ফেডারেশনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৩ দফা দাবি নিয়ে গত ৯ মে মানববন্ধন, ১১ মে কালোব্যাজ ধারণ, ২৫-২৭ জুন ৩ দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ৩০ জুন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ও পহেলা জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিসহ নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করে আসলেও শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে এখনো সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দীর্ঘদিন সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে রয়েছেন স্বায়ত্তশাসিত উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজ, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকে লাইব্রেরিও। ফলে অচলাবস্থায় পড়েছে দেশের উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি। এতে চরম ভোগান্তির শিক্ষার শিক্ষার্থীরা। তারা সেশনজটের আশঙ্কাও করছেন। এমনকি শিক্ষকরা বলছেন তাদের ৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন না।

শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি মনে করে, এটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত শিক্ষকদের অবমাননাকর একটি নীতি যার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদেরকে বঞ্চিত করা হবে। এ প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চরম বৈষম্যের শিকার হবেন। ঘোষিত প্রজ্ঞাপন শিক্ষক সমাজের জন্য অবমাননাকর। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নামে শিক্ষকদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে ফলে দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

শাবিপ্রবির শিক্ষকরা প্রত্যয় স্কিম নীতির বিরোধিতার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, এ স্কিমে আনুতোষিক শূন্য। বর্তমানে পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হন কিন্তু নতুন এ স্কিমে পেনশনাররা ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। বিদ্যমান পেনশন স্কিম অনুযায়ী, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে পেনশন পান সে জন্য বেতন থেকে কোনো টাকা কাটা হয় না কিন্তু নতুন স্কিমে কাটা হবে ১০ শতাংশ। বিদ্যমান ব্যবস্থায় কেউ অধ্যাপক পদ থেকে অবসরে গেলে গ্র্যাচুইটি পান ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, নতুন স্কিমে সেটি পাওয়া যাবে না। অবসরে গেলে অধ্যাপকরা এখন মাসিক পেনশন পান ৪৫ হাজার ৭৯০ টাকা যার বিপরীতে বেতন থেকে কোনো টাকা কাটা হবে না কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে যুক্ত হলে বেতন থেকে কেটে ও প্রতিষ্ঠানের টাকায় পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এককালীন কোনো টাকা পাবেন না পেনশনাররা। বর্তমানে প্রতি বছর পেনশনে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হলেও প্রত্যয় স্কিমে সেটি বাড়বে না। বিদ্যমান ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছরে, কর্মকর্তারা ৬২ এবং কর্মচারীরা ৬০ বছরে অবসরে যান। নতুন ব্যবস্থায় সবাইকে অবসরে যেতে হবে ৬০ বছর বয়সে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় শিক্ষকরা অর্জিত ছুটির বিপরীতে টাকা পেলেও সেই ব্যবস্থা নেই নতুন পেনশন স্কিমে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা  চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ও বৈশাখী ভাতা কিংবা এলপিআর সুবিধা পান। কিন্তু নতুন পেনশন স্কিমে সেটি থাকবে কিনা সেটি স্পষ্ট করা নেই।

শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিদ্যমান পেনশন নীতিতে শিক্ষকরা যে সকল সুযোগ-সুবিধা পেতেন, এই প্রত্যয় স্কিমের ফলে বেতন-বোনাস, উৎসব ভাতা কিছুই থাকবেনা। আর ৩০/৪০ বছর পরে যে পেনশনের সুবিধা দেখানো হচ্ছে সেটা আমরা প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে কোনো বীমায় রাখলেও পাব তাহলে এই প্রত্যয়স্কিমের যৌক্তিকতা  কি আমরা বুঝিনা। তিনি আরো বলেন, আমরা শিক্ষকরা এটা কোনভাবে মেনে নিতে পারি না এবং কখনো আমরা সেটি মানব না এবং যতদিন আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হচ্ছে ততদিন আমরা কর্মবিরতি পালন করে যাব ।


এসএ/সিলেট