প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে সিকৃবি শিক্ষকদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি

post-title

ছবি সংগৃহীত

অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাকে বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন আখ্যায়িত করে, সেটি বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল, ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত অর্ধ দিবস কর্মবিরতি পালন করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্প্রতি জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তিকরণ ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রর্বতনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের নিচ তলায় অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়। উক্ত কর্মসূচিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন অনুষদের প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় সিকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আল মামুনের সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ নিজেদের বক্তৃতা পেশ করেন।

সিকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ ভূঁইয়া তার বক্তৃতায় বলেন, "আগামী ২৪শে জুনের মধ্যে 'প্রত্যয় স্কিম' সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে বাংলাদেশ শিক্ষক ফেডারেশনের আহ্বানে বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হবে। ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হবে এবং ১লা জুলাই  তারিখ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে। চলমান পরিস্থিতিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যেন বন্ধ ঘোষণা না করতে হয়, খুব দ্রতই যেনো আমরা সমাধান পায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।"   

সিকৃবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও কৃষি অর্থসংস্থান ও ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শাহ আলমগীর তার বক্তব্য দেয়াকালীন বলেন, "এ আন্দোলন কোনো ব্যক্তি কিংবা সংগঠনের নয়। উন্নত দেশ, উন্নত জাতি গঠনের লক্ষ্যে এই আন্দোলন পুরো দেশের। প্রস্তাবিত 'প্রত্যয়' স্কিম বাস্তবায়ন হলে বর্তমান শিক্ষার্থী, যারা আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মত মহান পেশায় আসতে আগ্রহী, তাঁরাই এর ভুক্তভোগী হবেন। কাজেই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের চলমান আন্দোলন আগামী দিনের তরুণ সমাজের স্বার্থরক্ষা তথা উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে। আমরা এখনও আশা করি শিক্ষক সমাজকে যারা সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের চলমান প্রতীকী কর্মসূচি সর্বাত্মক আন্দোলনে পরিণত হবে। আমরা আমদের ন্যায্যটা পাচ্ছি না। আমরা আজও পর্যন্ত কোনো ধরণের আলোচনায় যেতে পারিনি। আমাদেরকে এখনও অবজ্ঞা করা হচ্ছে। অথচ এটা আমাদের বাঁচা মরার লড়াই। আমরা সরকার বিরোধী কোনো আন্দোলন করছিনা। মেধাবীদের অধিকার আদায়ের লড়াই এটা। যদি শিক্ষকদের যথাযথ দাবি না মানা হয়, তবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা জুন থেকে কোনো ক্লাস পরীক্ষা হবে না, কোনো শিক্ষক ক্লাসে যাবেন না, ডিন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করবেন না, কোনো সভা সেমিনার হবে না। সকল ধরণের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ ঘোষণা করা হবে।"

কর্মসূচী পালনকালে অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন, "শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা কোনোভাবেই যেন বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অনেকটা প্রতীকী কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণের সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচির মত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হলেও এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শিক্ষকদের সাথে দায়িত্বশীল কোনো পক্ষ যোগাযোগও করেননি। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-সমাজের মধ্যে চরম হতাশা এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে।"

এর আগে, একই দাবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে গত ২৬ মে মানববন্ধন ও ২৮ মে দুই ঘণ্টার  কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন শিক্ষকরা।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ই মার্চ, ২০২৪ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কতৃর্ক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, যে সকল শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারী ১ জুলাই, ২০২৪ তারিখের পর যোগদান করবেন তাদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিমের 'প্রত্যয় স্কিম' বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না।

এসএ/সিলেট