সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত : নগরে ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দী

post-title

ছবি সংগৃহীত

সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরবর্তিত রয়েছে। বন্যার পানি কিছুটা কমলেও মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও পানির নিচে রয়েছে। এছাড়া শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নতুন করে বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি ঢুকেছে।

উজানি ঢলে সিলেটের সুরমা নদীর তীরবর্তী নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়ি ও কলোনীতে বন্যা দেখা দেয়। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের। নগরীতে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ইতিমধ্যে ৪ হাজার পরিবার।

শুক্রবার (৩১ মে) সকাল থেকে সুুরমা নদীর পানি ডুকতে শুরু করে নগরীর  উপশহর সি-ব্লক, ডি-ব্লক ও ই-ব্লক একাংশ, যতরপুর, তোপখানা, মাছিমপুর, সোবহানীঘাট, তালতলা ও শেখঘাট ও কাজিরবাজার এলাকায়।

এরমধ্যে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাতেই পানি ডুকে তালতলাস্থ সিলেট ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে। ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘বন্যার পানি ওঠার কারণে এ স্টেশন থেকে মেশিনারিজ ২৭ নং ওয়ার্ডের আলমপুর স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকা উপশহর, যতরপুর, তোপখানা, মাছিমপুর ও সোবহানীঘাট এলাকার সড়ক ও বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাট, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদে পানি প্রবেশ করে। এতে বিপাকে পড়েন নগরের বাসিন্দারা। অনেকেই নিকট আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নেন।

নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উঠেছে কয়েকটি পরিবার। একই ওয়ার্ডের মতিন মিয়ার কলোনীর ৪০টি পরিবার, পাশ্ববর্তী ২৯নং বাসায়ও আশ্রয় নিয়েছেন কেউ কেউ।

বিভিন্ন কাউন্সিলরদের দেওয়া তথ্যমতে নগরীতে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ইতিমধ্যে ৪ হাজার পরিবার। তাদের পর্যাপ্ত পরিমান শুকনো খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সিসিক। শুক্রবার (৩১ মে) রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার বন্যা কবলিত এলাকার কাউন্সিলরদের কাছে পৌছে দেওয়া হবে।

এদিকে, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটে আকস্মিক বন্যায়  ১৩ উপজেলার মধ্যে ৭টি আক্রান্ত হয়েছে। বুধবার রাতের মধ্যে তলিয়ে যায় গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। বৃহস্পতিবার আরও দুই উপজেলা বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ নতুন করে প্লাবিত হয়।

বিয়ানিবাজার উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। অনেকের ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে গবাদি পশু ও পুকুর-খামারের মাছ। এতে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ৬ লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া নগরীতেও ঢুকছে পানি।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যা মোকাবেলায় এ পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৪৭টি। এরই মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন ৪ হাজার ৮০২ জন। গোয়াইনঘাট উপজেলায় উপজেলায় ৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৩৫৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। কানাইঘাট উপজেলায় ৩১টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৪৬৬ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জকিগঞ্জে ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এতে আশ্রয় নিয়েছেন ৯৫ জন। জৈন্তাপুরে ৪৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬৭৫ জন এবং কোম্পানীগঞ্জের ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৩৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বিয়ানীবাজার ৬৭টি ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বিয়ানীবাজারে ৬০ জন এবং গোলাপগঞ্জে ১৫ জন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন।

সিসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, নগরীর ১৫, ২২ ও ২৪ এই তিন ওয়ার্ডের নিচু এলাকায় বন্যার পানি ঢুকেছে। বন্যা মোকাবেলায় সবধরনের প্রস্তুতি রেখেছে সিসিক। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহায্যের জন্য খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। নগরীর প্রত্যেক এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। এছাড়া শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে, শুক্রবার সিলেটের নদনদীর পানি কিছুটা কমেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ০ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা দুটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে অমলসিদ পয়েন্টে ২০৭ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ২১৩ সেন্টিমিটার এবং শেওলা পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া, সারি গোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। আর যদি উজান থেকে ঢল না নামে এবং ভারি বর্ষণ না হয় তবে বন্যার পানি বৃদ্ধির আশংকা নেই।

তিনি আরও বলেন, সিলেট জেলার ১০৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪৮টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ৬ লক্ষ ৪১ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যা আক্রান্ত মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলছে। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেনা তাদেরকে বাড়িতে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে ইউনিয়নভিত্তিক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।


এসএ/সিলেট