মানসম্পন্ন খাদ্য উৎপাদন করে দেশের...
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দিন দিন আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমলেও জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন...
মো. আব্দুল মালিক
ফয়সল আহমদ রুহেল::
জীবনভর শিক্ষার মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। বিচিত্র বিষয়ে অভিজ্ঞতা গ্রহণ করেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করেন। সমাজকে পরিবর্তন করেন। আমাদের আদর্শ শিক্ষকেরা, এই আদর্শের জায়গা পর্যন্ত আসা তাদের জন্য মোটেই সহজ ছিল না। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তারা আজকে এই জায়গাতে এসেছেন। সেই আলোকিত মানুষেরাই আমাদের পথ দেখাচ্ছেন। তাদের-ই একজন আলোকিত শিক্ষক মো. আব্দুল মালিক। তিনি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাড়ুয়া আনোয়ারা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।
জন্ম : মো. আব্দুল মালিক সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সুন্দাউরা গ্রামে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম কাছিম আলি (মোড়ল) এবং মাতা রূপেজা খাতুন। ৬ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে শিক্ষক তৃতীয়।বর্তমানে তিনি স্বপরিবারে সিলেট নগরীর সুবিদবাজারে বসবাস করছেন।
শিক্ষা জীবন : মো. আব্দুল মালিক ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্ণাছগাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার মধ্যদিয়ে শিক্ষা জীবন শুরু। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পরে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সিলেট সদর উপজেলার উমাইরগাও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং ওই বছরেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায়, ২৬শে মার্চ এর পর থেকে সারা দেশের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। অতঃপর ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে গোয়াইনঘাট উপজেলার গোরাগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ৮ম শ্রেণীতে জেলা পরিষদ মেধাবৃত্তি লাভ করেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে একই বিদ্যালয় থেকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এর অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এসএসসির পর পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে পড়ায় দুই বছর বিরতির পর ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে এমসি ইন্টার কলেজে একাদশ শ্রেণীতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সিলেট সরকারি কলেজ (বর্তমান এমসি কলেজ) থেকে ডিগ্রি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৮৬ সালে বিএড সমাপ্ত করেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ এবং ২০০০ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হতে এম এড সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন : মো. আব্দুল মালিক ডিগ্রি শেষ করার পরই সিলেটের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭ নভেম্বর থেকে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইনগুল হাজি কলিম উল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মে পর্যন্ত উক্ত বিদ্যালয়েই কর্মরত ছিলেন। ২৯শে মে, ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাড়ুয়া আনোয়ারা উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে পাড়ুয়া আনোয়ারা উচ্চবিদ্যালয়কে কলেজ শাখায় উন্নীত করে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ৩০ শে সেপ্টেম্বর ২০২১ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেয়া পর্যন্ত এই পদেই বহাল ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট এর প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান : শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ১৯৯৪ এ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০০৩ এ শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন।
কৃতিত্ব : স্কাউট আন্দোলন জোরদার ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের যুব সম্প্রদায়কে সুসংগঠিত করে চরিত্রবান, দেশ প্রেমিক ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রচেষ্টার স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে ২০০৭-২০১০ খ্রি. এবং ২০১০-২০১৩ খ্রি. পর্যন্ত দুইবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার স্কাউটস কমিশনার এর দায়িত্ব অর্পণ করা হয় এবং সিলেট জেলা পর্যায়ে উপর্যুক্ত কার্যক্রমের স্বীকৃতি স্বরূপ তিন বার সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ স্কাউট আন্দোলনের সার্বিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ব্যক্তিগত প্রয়াস ও অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ স্কাউটস এর পক্ষ থেকে মেডেল অব মেরিট (২০০২), বার-টু-দি মেডেল অব মেরিট (২০০৬), প্রেসিডেন্ট'স অ্যাওয়ার্ড (২০১০), লং সার্ভিস ডেকোরেশন (২০১৯) প্রদান করা হয়।
দায়িত্ব পালন : তিনি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস) কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার তিন বারের সহ-সভাপতি এবং সিলেট জেলা বাশিস এর তিন বারের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে শিক্ষক সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিক্ষা উন্নয়ন ও প্রসারে আপ্রাণ প্রচেষ্টা ছিলো। এছাড়াও তিনি পাড়ুয়া আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়কে এই উপজেলার সর্বপ্রথম কলেজ শাখায় উন্নীত করেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। সিলেট বিজ্ঞান কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডাইরেক্টর এবং দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ডাইরেক্টর ছিলেন। সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে ২০০৭-২০১৩ খ্রি. পর্যন্ত সিলেট বিভাগের মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গ্রামীণ সমাজে শিক্ষার উন্নয়ন : ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে এসএসসি পাশ করার পর মো. আব্দুল মালিক "গ্রাম বাংলা শিক্ষা ও সমাজ” (গ্রাবাশিস) সংস্থার মাধ্যমে গ্রামীণ সমাজের শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। উক্ত সংস্থাটি ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে মরহুম তৈয়বুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান।
পারিবারিক : মো. আব্দুল মালিক পারিবারিক জীবনে তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক। একমাত্র মেয়ে এমবিবিএস ডাক্তার ও তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট, কৃষি মন্ত্রণালয় এ কর্মরত, মেঝো ছেলে বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত এবং ছোটো ছেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইংজিনিয়ারিং এ অনার্স এ অধ্যয়নরত। স্ত্রী নাজমা বেগম সন্তানদের মানুষ হিসেবে গড়ার কারিগর।
মো. আব্দুল মালিক দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে শিক্ষার্থীদের খুব ভালোভাবে অনুধাবন করার, তাদের অনুভূতিগুলোকে বোঝার এবং তাদের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করেন। তিনি প্রবল প্রাণশক্তির অধিকারী ছিলেন। জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে, বিদ্যাবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করেন। তিনি প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হতেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে। যাদের কৌতূহল, জিজ্ঞাসা, জীবনাকাঙ্ক্ষা ও জীবনতৃষ্ণা প্রবল। দীর্ঘ কর্মজীবনে সততা এবং নিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করেন। নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও গ্রামীণ সমাজের শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। এছাড়াও কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট জেলায় শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করেন। আমরা এই আলোকিত শিক্ষকের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি।
লেখক : সাংবাদিক, চ্যানেল এস
টেলিভিশন , লন্ডন ।
এসএ/সিলেট