শ্রীমঙ্গলসহ দেশের ৭ জেলায় ফিলিপাইনের আনারসের চারায় পরীক্ষামুলক চাষ সফল

post-title

ছবি সংগৃহীত

শ্রীমঙ্গলে আনারস বাগান বেশ বিখ্যাত এবং এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ, এখানকার আনারস বাগান তার সাধ ও মানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।  

সম্প্রতি  ফিলিপাইন থেকে আমদানিকৃত, আনারসের চারা রোপন করে শ্রীমঙ্গলে পরিক্ষামুলক চাষ  চমকপ্রদভাবে সফল হয়েছে। এমডি-২ জাতের এই আনারস স্থানীয় কৃষকদের মাঝে নতুন আশা জাগিয়েছে। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে এবং কৃষকদের অংশগ্রহণে এই আনারস চাষে দেখা গেছে উচ্চ ফলন ও ভালো মানের ফল।

শ্রীমঙ্গল কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান জানান,  ফিলিপাইন থেকে আনা এমডি-২ জাতের আনারসের চারাগুলো কয়েক মাস আগে শ্রীমঙ্গলের নির্দিষ্ট কিছু বাগানে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা হয়। শুরু থেকেই চারাগুলোর বৃদ্ধি স্বাভাবিক ছিল এবং নির্ধারিত সময়ে গাছে ফল আসে। ফলের আকৃতি, রং, স্বাদ এবং বাজারযোগ্যতা সবই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানের মতো।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন বলেন, 'আমাদের এলাকার মাটি এই জাতের আনারস চাষের জন্য উপযোগী। পরীক্ষামূলক ফলাফল দেখে আমরা ব্যপকহারে চাষে যাওয়ার কথা ভাবছি।' তিনি আরও জানান, এই জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় অধিক ফলনশীল ও রসালো। ফলে বাজারমূল্যও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

আনারস চাষে বৈচিত্র্য আনতে এবং কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে এই ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এভাবে সফলতা অব্যাহত থাকলে শ্রীমঙ্গল হয়ে উঠতে পারে উন্নত জাতের আনারস উৎপাদনের একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল।

সুত্র জানায়, বাংলাদেশের ফল চাষে নতুন সম্ভাবনার নাম এমডি-২ আনারস। বিশ্বজুড়ে যার পরিচিতি 'গোল্ডেন সুইট' বা 'এক্সট্রা সুইট পাইনআপেল' নামে। ফিলিপাইন, কোস্টারিকা, থাইল্যান্ডের মতো দেশে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। এখন বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে এর পরীক্ষামূলক উৎপাদন।

এই আনারস শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ব্রোমেলিন নামের হজম সহায়ক এনজাইম, এবং স্বল্প ক্যালরির একটি স্বাস্থ্যকর ফল।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, এমডি-২ আনারসের বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—এটি সহজে নষ্ট হয় না, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়, এবং রপ্তানিযোগ্য মান বজায় রাখে। বাংলাদেশে মৌলভীবাজার,  টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এই ৭ জেলায় প্রথমবারের মতো ফিলিপাইনের এমডি-২ জাতের আনারস পরিক্ষামুলক চাষ করা হয়। তিনি বলেন, ৭ জেলাতেই পরিক্ষামুলক চাষ সফল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ৭ জেলার উৎপাদিত আনারসের মধ্যে শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত আনারস গুনে, মানে, স্বাদে অর্থাৎ সবদিক থেকে অনন্য।

অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোনালিসা সুইটি আরো বলেন, দেশের ৭ জেলার ৩৮০ জন আনারস চাষীর প্রত্যেককে ২২৫০ টি করে ফিলিপাইনের এমডি-২ জাতের চারা বিনামুল্যে বিতরন করা হয়েছিল।

এমডি-২ আনারস হতে পারে বাংলাদেশের ফল উৎপাদনে এক নতুন দিগন্ত। সোনালি স্বাদের এই আনারস রপ্তানির মাধ্যমে বাড়তে পারে দেশের আয়। সাথে কৃষকের মুখেও ফোটাতে পারে হাসি।

এসএ/সিলেট