শ্রীমঙ্গলে লটকন চাষে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

post-title

ছবি সংগৃহীত

শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি টিলা আর উর্বর লাল মাটিতে লটকনের ভাল ফলন হয়েছে।। এখানকার কৃষকরা এখন লটকন চাষকে লাভজনক অর্থকরী ফসল হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। গাছভর্তি ঝুলে থাকা লটকনের থোকায় সোনালি রঙের ফল যেন প্রকৃতির রূপকথা বলছে।

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় লটকন চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা ও উঁচু জমিতে এই ফল চাষ করে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। শ্রীমঙ্গলের লটকন এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে, যা স্থানীয় চাষিদের আয়ের নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে।

শুধু পাহাড়ি এলাকা নয়, শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও, রাজঘাট, ভাড়াউড়া, কালিঘাট, ডলুছড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে লটকন চাষ হচ্ছে। কৃষকদের ভাষ্যমতে, একবার গাছ রোপণ করলে দীর্ঘদিন ফল পাওয়া যায়। রোগবালাই কম, পরিচর্যা সহজ ও খরচ অত্যন্ত কম—এই কারণেই লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানেও লটকন গাছ রয়েছ। যা প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাজারে এখন শ্রীমঙ্গলের লটকনের কদর অনেক। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর সরবরাহ বাড়ছে। মৌসুমে প্রতি কেজি লটকন ৮০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়, ফলে চাষিরা প্রতি গাছ থেকে গড়ে ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন সড়কে, বাজারে,  কলেজ রোড ও শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌমোহনা চত্বরে লটকন বিক্রি করতে দেখা যায়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লটকন আকারে বড়, রং উজ্জ্বল ও খেতে অত্যন্ত মিষ্টি হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

লটকন এক প্রকার দেশীয় ফল, যা অত্যন্ত পুষ্টি ও ঔষধিগুণে ভরপুর। ফল গোলাকার , পাকলে এর ফল হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ফলের খোসা ছাড়ালে ৩/৪টি রসালো অম্লমধুর স্বাদের বীজ পাওয়া যায়। ফল হিসেবেই ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের  নরসিংদী, সিলেট, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল,  গাজীপুর, নেত্রকোনা ও   ময়মনসিংহ জেলায় বেশি চাষ হয়।

বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে ফলটি, 'বুবি' নামে সর্বাধিক পরিচিত। ফলটি  ত্রিপুরা কাছার   এবং বাংলাদেশ  অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ফলে। তাছাড়া মালয়েশিয়া,  থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে বাণিজ্যিক চাষ হয়।  এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, বি, সি এবং বি-১, বি-২, বি-৩, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাসিয়ম আছে।

শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়া গ্রামের কৃষক মো. আতর আলী বলেন, তিনি আকবরপুর কৃষি গবেষনা কেন্দ্র থেকে দুইটি চারা এনে রোপন করেছিলেন ৬ বছর আগে। পরে ধীরে ধীরে কলম করে চারা করেন। এখন তার ৩৫ টি লটকন গাছ রয়েছে। এবার তার ৬ টি গাছে ফল ধরেছে। ৬ টি গাছ থেকে তিনি ১০০০ কেজি ফলন পেয়েছেন। তিনি ১০০ টাকা কেজি দরে এসব লটকন বিক্রি করে ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। আতর আলী আরো জানান, গত মৌসুমে লটকন বিক্রি করে তিনি ৬০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী মৌসুমে তার আয় আরো বাড়বে।

শ্রীমঙ্গলের লটকন চাষ আজ শুধু মৌসুমি একটি ফল নয়, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গড়ে উঠছে। সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক সংরক্ষণ প্রযুক্তি নিশ্চিত হলে লটকন হতে পারে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার একটি নতুন ক্ষেত্র।

এসএ/সিলেট