ইমজার নতুন নেতৃত্ব :...
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (ইমজা) সিলেটের ২০২৫ সালের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র ভিডিও...
সিলেটে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আলোচনা সভা
ছবি সংগৃহীত
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ রেজাউল করিম পিপিএম-সেবা বলেছেন, দৈনিক সংগ্রাম প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বস্তুনিষ্ট সাংবাকিতার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। ৭১ পরবর্তী ২য় স্বাধীনতা খ্যাত জুলাই বিপ্লবে স্রোতের প্রতিকূলে থেকে সংগ্রাম পত্রিকার সাহসিকতা জাতি কোনদিন ভুলবে না। জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদদের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রæত শিফা কামনা করে তিনি বলেন, বিগত সরকার শুধু পুলিশ নয়, পুরো প্রশাসন যন্ত্রকে জনগণের বিপরীতে গিয়ে দলদাসে পরিণত করেছে। যার ফলে কতিপয় অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যদের এমন নৃশংস হত্যাকান্ডে আমরা লজ্জিত।
তিনি শনিবার সিলেট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দৈনিক সংগ্রামের ৫০ বছর পূর্তি (সুবর্ণজয়ন্তী) উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এসএমপি কমিশনার বলেন, তৎকালিন পুলিশের উচ্চপদস্ত কতিপয় কর্মকর্তার কারণে পুরো পুলিশ বাহিনী কলুষিত হয়েছে। টানা ১৫ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে আরো সময়ের প্রয়োজন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সকল সরকারই চায় অনুগত পুলিশ।
এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলে পুলিশকে একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক তুরাবের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। ইতোমধ্যে তুরাব হত্যা মামলায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে এর কিছুটা নমুনা দেখানো হয়েছে।
দৈনিক সংগ্রামের সিলেট ব্যুরো প্রধান কবির আহমদের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক খালেদ আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির, বাংলাদেশ বেতার সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তারিক, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি খালেদ আহমদ ও দৈনিক প্রভাতবেলার সম্পাদক কবীর আহমদ সোহেল।
হাফিজ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ রাহাতের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সূচিত সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর সমন্বয়ক আবু সাঈদ ও শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের সমন্বয়ক দেলওয়ার হোসেন শিশির, দৈনিক সংগ্রামের বড়লেখা প্রতিনিধি কারা নির্যাতিত মজলুম সাংবাদিক কাজী রমিজ।
এসএমপির ডেটুটি কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আলম, এডিসি (মিডিয়া) সাইফুল ইসলাম, কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়াউল হক, দৈনিক সিলেট বাণীর নির্বাহী সম্পাদক এম এ হান্নান, দৈনিক খবরপত্রের ব্যুরো প্রধান এম এ মতিন, দৈনিক সিলেট বাণীর সাব এডিটর চৌধুরী দেলওয়ার হোসেন জিলন, দৈনিক নওরোজের সিলেট প্রতিনিধি মো. মুহিবুর রহমান, দৈনিক সিলেটের ডাকের স্টাফ রিপোর্টার আমিরুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া ও আনাস হাবিব কলিন্স, দৈনিক সিলেটের দিনকালের নির্বাহী সম্পাদক নাজমুল কবীর পাভেল, সিলেট বেতার প্রতিনিধি এম রহমান ফারুক, দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার এমজেএইচ জামিল ও দৈনিক সংগ্রাম সিলেট অফিসের ফটো সাংবাদিক ফয়ছল আহমদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, সিলাম রিসোর্টে অপরাধ কর্মকান্ড সংঘটিত হয়েছে। সেই ঘটনায় মামলাও হয়েছে। এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অসামাজিক কার্যকলাপ যেমন অপরাধ, তেমনী কোন প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও আগুন দেয়াও অপরাধ। এসবের অপরাধের বিচার হওয়া উচিত। চাদাঁবাজদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া উচিত। এতে অন্যায়কারীরা প্রশ্রয় পাবে। অপরাধ কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে। নগরীর সাগরদিঘীরপারের ড্রিমসিটি দখলের ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। আগে এক পক্ষের দখলে ছিল, নতুন করে আরেক পক্ষ দখলের চেষ্টা করতে গিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। সিলাম রিসোর্ট কান্ড ও ড্রিমসিটি সংঘর্ষের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, দেড় দশক পর আমরা বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ফ্যাসিস্টের দোসর সাংবাদিকদের সাথে আমাদেরকে এখনো চলতে হচ্ছে। যারা আমাদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে তাদের নিয়ে চলা খুবই কষ্টকর। যতটা সম্ভব তাদেরকে এড়িয়ে চলা উচিত। আমরা টানা ১৬ বছর সীমাহিন জেল-জুলুম নিপীড়ন সয়েছি। আর পতনের ৫ মাস যেতে না যেতেই ফ্যাসিস্টরা প্রকাশ্য ঘুরছে। তারা ফেইসবুকে গুজব ছড়াচ্ছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় অল্প সময়ের মধ্যেই ওরা রাজপথে মিছিলে নেমে যাবে। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ও ছাত্র নেতৃবৃন্দকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা টানা ১৬ বছর শত শত মিথ্যা মামলায় কারাগারে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আর চিহ্নিত ফ্যাসিস্টরা এখনো বুক ফুলিয়ে চলছে। আমরা ফ্যাসিস্টদের মতো মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় বিশ^াসী নয়। তবে প্রকৃত অপরাধী, অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার ও বিচার চাই। সকল অস্ত্র উদ্ধার চাই। আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে সকল ফ্যাসিস্টদের বাদ দিতে হবে। অন্যথায় ছাত্র-জনতার ধৈর্য্যের বাধঁ ভেঙ্গে যেতে পারে।
সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ছাত্ররা আমাদের অগ্রগামী হয়ে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে। আমরা টানা আন্দোলন সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় তাদের সাথে ছিলাম। অথচ ফ্যাসিস্টদের পতনের কয়েক মাস যেতে না যেতেই বিপ্লবীদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিয়েছে। ফলে আমাদের জন্য সামনে আরো বড় বিপদের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। আমাদের বিভক্তির কারণে সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই সময় থাকতে দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যকে সুসংহত করতে হবে।
সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে মিডিয়া অঙ্গন ভালো ছিল না। ঢাকায় হেড অফিসে ফ্যাসিস্টের দোসররা বসে মাঠ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের দিয়ে ইচ্ছেমাফিক এসাইনমেন্ট করাতে বাধ্য করেছে। আর এতে আঞ্চলিক সাংবাদিকরা তোপের মুখে পড়েছেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকতা কলুষমুক্ত হয়েছে। এর ধারা পরবর্তী সরকারকে অব্যাহত রাখতে হবে।
সিলেট বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তারিক বলেন, বিগত ১৬ বছরের মুক্ত গণমাধ্যম সুচকে বাংলাদেশ ৪৪ ধাপ পিছিয়েছে। এর মাধ্যমে সাংবাকিতার নমুনা উন্মোচিত হয়েছে। বেতার যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান সেখানে থেকে আমাদের কিছু করার ছিল না। তবে সত্যের পক্ষে থাকায় আমরা বঞ্চিত ছিলাম। সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিগত সময়ে আমরা কতটা ভালো ছিলাম এর ছোট্ট উদাহরণ হলো সিলেটের ডাকের মতো পত্রিকাকেও বন্ধ করা হয়েছিল। আমরা মুক্ত গণমাধ্যম চাই। সত্য তুলে ধরতে চাই। সভাপতির বক্তব্যে কবির আহমদ বলেন, সংগ্রামের ৫০ বছর আমাদের জন্য সংগ্রামমূখর ছিলো। শুধু জাতীয়ভাবে নয়, স্থানীয়ভাবেও আমাদের উপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করতে দেয়া হয়নি। সম্পাদক আবুল আসাদকে হেয় করা হয়েছে, কারাগারে নির্যাতন করা হয়েছে। সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজীকে কারাগারে নির্যাতনের কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন। সত্য ও বস্তুনিষ্ট সাংবাকিতায় জাতির প্রত্যাশা পুরণে সংগ্রাম সবসময় পাশে থাকবে। সবাইকে সংগ্রামের পাশে থাকার আহ্বান জানাই।
এসএ/সিলেট